জাতীয় সংবাদ

জেলায় জেলায় আনন্দ মিছিল

প্রবাহ রিপোর্ট : প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ত্যাগের খবরে সারাদেশে আনন্দ মিছিল হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
চট্টগ্রাম: সদ্য পদত্যাগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে বিজয় উল্লাস করেছে। গতকাল সোমবার বিকেলে ৩টার পর থেকে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের খবর পেয়েই রাস্তায় নেমে এসে বিজয় উদযাপন করতে দেখা গেছে নারী শিশুসহ সর্বস্তরের মানুষকে। এ সময় উল্লাসিত মানুষকে নানা স্লোগান দিতে দেখা গেছে। সরেজমিন দেখা গেছে, বিকেল ৩টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে নগরের চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা থেকে শুরু হয় বিজয় মিছিল। অংশ নেন নারী-শিশুসহ হাজার হাজার মানুষ। আধ ঘণ্টার মধ্যে বহদ্দারহাট মোড়ে সমবেত হন অন্তত ১০ হাজার মানুষ। এরপর ছাত্র বিক্ষোভের সময় নিহত শিক্ষার্থীদের স্মরণ করেন বহদ্দারহাট ও মুরাদপুর হয়ে বিজয় মিছিল আগান লালদিঘীর পথে। নগরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এভাবেই খ- খ- বিজয় মিছিল এগোয় লালদিঘীর দিকে। নগরের সব পথ মিশে গেছে ওই ঐতিহাসিক ময়দানে। এ সময় শিক্ষার্থীদের হাতে ও মাথায় পতাকা স্লোগান দিতে দেখা গেছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানজিন বলে, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন। বিজয় আমাদের। চকবাজারের বাসিন্দা নাজমুল ইসলাম বলেন, কি যে আনন্দ লাগছে বোঝাতে পারবো না। এ বিজয় নির্যাতিত ছাত্র জনতার। সেখানে জড়ো হওয়া মানুষ ‘জিতেছেরে জিতেছে, ‘ছাত্র সমাজ জিতেছে, ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’, ‘ভুয়া ভুয়া’-সহ সরকার পতনের নানা স্লোগান দিতে থাকেন। এর আগে বিকেল ৪টায় প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন বলে জানিয়ে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, এখন রাজনৈতিক ক্রান্তিকাল চলছে। একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে। সব হত্যার বিচার হবে। সেনাবাহিনীর ওপর আস্থা রাখেন। আমরা রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। এর আগে বেলা আড়াইটায় বঙ্গভবন থেকে একটি সামরিক হেলিকপ্টার শেখ হাসিনাকে নিয়ে যাত্রা করে। এ সময় তার সঙ্গে তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা ছিলেন।
সিরাজগঞ্জ: বৃষ্টি উপেক্ষা করে পথে পথে জন¯্রােত নিয়ে আনন্দ মিছিল উদযাপন করেছেন সিরাজগঞ্জের ছাত্র-জনতা। গতকাল সোমবার বিকেল ৫টায় সিরাজগঞ্জ পৌর শহরের বাজার স্টেশন এলাকায় এ আনন্দ মিছিলে অংশ নিতে সর্বস্তরের মানুষ যোগ দেন। শহরের বিভিন্ন অলিগলি থেকে মিছিল বের হয়। কেউ হেঁটে, কেউ মোটরসাইকেল ও গাড়িতে করে এসে মিছিলে অংশ নেন। পরে শহরের মুজিব সড়ক ও এসএস রোড প্রদক্ষিণ করেন তারা। মিছিলে শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী, শিশু, নারী, বয়োবৃদ্ধ সব বয়সীদের অংশ নিতে দেখা গেছে। এর আগে বিভিন্ন স্থান থেকে আসা খ- খ- মিছিলগুলো বাজার স্টেশন এলাকায় জড়ো হয়। অল্প সময়ের মধ্যে জনতার ¯্রােত দেখা গেছে। এ সময় বাজার স্টেশন এলাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কাছে গিয়ে অনেকেই ‘স্বাধীন স্বাধীন’ স্লোগান দেন। শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে শ্রমজীবীসহ সর্বস্তরের মানুষ এ স্লোগান দিতে থাকেন। শহরের বাজার স্টেশন এলাকায় সেনাবাহিনীর কয়েকটি গাড়ি যাওয়ার সময় সেনাবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে ছাত্রদের হাত মিলাতেও দেখা গেছে। সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মুনতাসীর মেহেদী বলেন, আমাদের এক দফা আন্দোলন সফল হয়েছে। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।
টাঙ্গাইল: শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের খবরে আনন্দ মিছিল করেছে টাঙ্গাইলের শিক্ষার্থী-অভিভাবক সমাজ। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অভিভাবকরাও এ আনন্দ মিছিলে যোগ দেয়। প্রথমে টাঙ্গাইল শহীদ মিনার চত্বর ও পুরাতন বাস স্ট্যান্ডে জড়ো হয় শিক্ষার্থীরা। পরে মিছিলটি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
বান্দরবান: শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার খবরে বান্দরবানে অনন্দ মিছিল করেছে সাধারণ মানুষ। বিকেলে শহরের ট্রাফিক মোড়ে এ আনন্দ মিছিল করা হয়।
ঝিনাইদহ: শেখ হাসিনার পতনের খবরে শিক্ষার্থীরা শহরের পায়রা চত্বরে রং খেলায় মেতে ওঠেন। অনেকেই উঁচু স্থানে উঠে জাতীয় পতাকা নিয়ে স্লোগান দেয়। পুরো শহর উৎসবে মেতে ওঠে।
ভোলা: জাতীয় পতাকা নিয়ে আনন্দ মিছিল করেছেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। এ সময় তারা বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা থেকে শ্লোগান দিয়ে শহরের সদর রোড বিভিন্ন সড়ক পদক্ষিণ করে বাংলাস্কুল মোড়ে এসে জড়ো হন।
খুলনা: কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নামা শিক্ষার্থীদের আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের এক দফায় পরিণত হয়। সে দাবি মোতাবেক ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের মাত্র সাত মাসেই ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন আন্দোলনে পতন হয়েছে সরকারের। শেখ হাসিনার পতনে খুলনার রাজপথে আনন্দ উল্লাস করছেন আন্দোলনকারীরাসহ সাধারণ জনতা। শহরের প্রতিটি অলিগলিতে আনন্দ মিছিল করেন সাধারণ মানুষ। বিভিন্ন এলাকা থেকে জন¯্রােত মহানগরীর শিববাড়ির দিকে এগোচ্ছে। ছাত্র-জনতা স্বতঃস্ফূর্ত স্লোগানে স্লোগানে উল্লাসে ফেটে পড়েন। মিষ্টি বিতরণ করেন সবাই। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি), খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট), সরকারি বিএল কলেজের হাজারও শিক্ষার্থী আনন্দ উল্লাস করেন। সব মিলিয়ে যেন উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে খুলনা।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button