ধানমন্ডি ৩২ থেকে আটক ব্যক্তিদের উদ্ধার করলেন সেনা সদস্যরা

বৃহস্পতিবার নারীসহ ১০০ জনের বেশি লোককে আওয়ামী লীগ সন্দেহে মারধর করতে দেখা যায়, ৯নারী সহ ২১জনকে নিউ মডেল কলেজের মধ্যে আটকে রাখে ছাত্ররা, যাদেরকে সেনাবাহিনী এসে উদ্ধার করে নিয়ে যায়
প্রবাহ রিপোর্ট : ধানমন্ডি ৩২ নম্বর ও আশপাশের সড়ক থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের হাতে আটক প্রায় ৩০ জনকে উদ্ধার করেছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১টার দিকে ৩২ নম্বরের উল্টোপাশে শুক্রাবাদ নিউ মডেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ক্যাম্পাস থেকে তাদের উদ্ধার করা হয়। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের আগে গত বুধবার রাত থেকে ধানমন্ডি ও আশপাশে অবস্থান নেয় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্ররা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আওয়ামী লীগের কিছু কর্মী-সমর্থক ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের দিকে আসলে ছাত্রদের ধাওয়া তারা ফিরে যায়। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ৩২ নম্বর ও শুক্রাবাদ এলাকায় আওয়ামী লীগার সন্দেহে কয়েকজনকে মারধর করা হয়। এরপর তাদেরকে নিউ মডেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ক্যাম্পাসে আটক রাখা হয়। এ ছাড়া পথে পথে যারাই ভিডিও ধারণ ও ছবি তুলছিলেন তাদের মোবাইল চেক করা হয়। মোবাইলে বঙ্গবন্ধুর ছবি, আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট তথ্য পাওয়ায় আরও কয়েকজনকে আটক করতে দেখা যায়। সরেজমিনে দেখা যায়, সন্দেহজনক ব্যক্তিদের মোবাইল চেক করছেন রাস্তায় থাকা শিক্ষার্থীরা। কেউ মোবাইল বের করলেই ছবি বা ভিডিও ধারণ না করার অনুরোধ জানানো হয়। এ সময় কাউকে সন্দেহ হলে তাদের মোবাইল চেক করা হয়। ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের সামনে মাইকে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবদুর রাজ্জাককে ঘোষণা দিতে শোনা যায়, সকালে আওয়ামী লীগের দুষ্কৃতিকারীরা ৩২ নম্বরের সামনে এসে ঝামেলা করার চেষ্টা করেছিল, ছাত্র-জনতা তাদের প্রতিহত করেছে। এখন যাদের ধরবেন উপযুক্ত প্রমাণ না পেলে কিছুই করবেন না। দুষ্কৃতিকারীদের নিউ মডেল কলেজে আটকে রাখবেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল আটটার পর থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ১০০ জনের বেশি লোককে আওয়ামী লীগ সন্দেহে মারধর করতে দেখা যায়। তারা কিল, ঘুষি ছাড়াও লাঠি, পানির পাইপ দিয়ে মারধর করে। নিউ মডেল কলেজের ভেতরে আটকে রাখাদের মধ্যে নারীও ছিল। বেলা পৌনে একটার সময় সেনাবাহিনীর চারটি এবং বিজিবির একটি গাড়িতে এসে নিউ মডেল কলেজের সামনে থাকা শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেন সেনা ও বিজিবি সদস্যরা। পরে কয়েকজন সেনা সদস্য কলেজের ভেতরে ঢুকে আটকে রাখাদের বের করে গাড়িতে তোলেন। এর মধ্যে একটি গাড়িতে ৯ জন নারী এবং ২টি গাড়িতে ২০ জনের বেশি পুরুষকে তোলেন। এরপর তাদের নিয়ে পান্থপথের দিকে চলে যায় গাড়িগুলো। এ সময় ছাত্ররা সন্দেহভাজন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে ভুয়া ভুয়া স্লোগান দেন। তখন ১০ জনের মতো সেনা সদস্য নিউ মডেল কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আওয়ামী লীগের শাসনামলে গত ১৬ বছর ধরেই নানান আয়োজনে পালন হয়ে আসছিল জাতীয় শোক দিবস। সবচেয়ে বড় আয়োজনটিই হতো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে ঐতিহাসিক বাড়িকে ঘিরে। ১৯৭৫ সালের এই কালো রাতেই বিপথগামী সেনাসদস্যদের হাতে স্বপরিবারে হত্যার শিকার হয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এবছর গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতা ছেড়ে চলে যাওয়ার পর ভিন্ন পরিস্থিতিতে শুরু হয় দিবসটি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, অন্তবর্তীকালীন সরকারের কেউ-কেউসহ বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীরাও দিবসটিকে কেন্দ্র করে ‘ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ করে রাজপথে অবস্থান নেওয়ার কথা জানান। ঘোষণা অনুযায়ী, গত বুধবার দিবাগত গভীর রাত পর্যন্ত ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের আশপাশে অবস্থান নিয়েছিলেন অনেকে। গত বুধবার মধ্যরাতের পরে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের সামনে মাইকে বিভিন্ন গান বাজিয়ে আনন্দ উল্লাস করছে অবস্থানকারীদের। ‘লুঙ্গি ডান্স’, ‘দুষ্টু কোকিল ডাকেরে’, ‘রূপবানে নাচে কোমর দুলাইয়া’ প্রভৃতি গানের সঙ্গে নেচে উল্লাস করেন তারা। তাদের অনেকের মাথায় জাতীয় পতাকা বাঁধা দেখা গেছে, কারও কারও হাতেও ছিল। তারা কিছুক্ষণ পর পর থেমে নানা স্লোগান দিচ্ছিলেন।