গানের তালে তালে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আরও ২ জন গ্রেপ্তার
প্রবাহ রিপোর্ট : চোর সন্দেহে চট্টগ্রাম নগরীর আখতারুজ্জামান উড়াল সেতুর নিচে ২ নম্বর গেট মোড় এলাকায় খুঁটির সঙ্গে দুই হাত বেঁধে গানের তালে নেচে-গেয়ে শাহাদাত হোসেন (২৪) নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আরও দুই জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গত রোববার রাতে চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তাররা হলেন- খুলশী থানাধীন ডোবারপাড় এলাকার এমএস দুলালের ছেলে মেহেদী হাসান সাগর (২৮) ও একই এলাকার নুর ইসলামের ছেলে শান্ত (২৮)। র্যাব-৭ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) শরীফ উল আলম এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, মেহেদী হাসান সাগরকে নগরের খুলশী থানাধীন গরীবুল্লাহ শাহ মাজারের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে খুলশী থানাধীন জামতলা এলাকা থেকে শান্তকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা শাহাদাত হোসেনকে হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। বলেছে, গত ১৩ আগস্ট আসামি মেহেদী হাসান সাগর ভুক্তভোগী শাহাদাত হোসেনকে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে যায়। পরে তাকে অপহরণ করে ভুক্তভোগীর স্ত্রীর কাছে মুক্তিপণ দাবি করেছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে। এর আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর নগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তিন জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (পিআর) কাজী তারেক আজিজ বলেন, গত ১৩ আগস্ট রাত ১০টা থেকে ১৪ আগস্ট রাত দেড়টার মধ্যবর্তী সময়ে ২ নম্বর গেট ট্রাফিক পোস্টের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে বেধড়ক মারপিট করে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় ভিকটিম শাহাদাতকে। হত্যার পর গত ১৩ আগস্ট রাতের অন্ধকারে শাহাদাতকে পাঁচলাইশ থানাধীন বদনাশাহ মাজার সংলগ্ন রাস্তার সামনে অজ্ঞাত লোকজন ফেলে চলে যায়। পাঁচলাইশ থানা পুলিশ ১৪ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় লাশটি উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পাঁচলাইশ থানা পুলিশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করে। বর্বরোচিত ও নৃশংস এ হত্যাকা-ের ভিডিও ফুটেজ গত ২১ আগস্ট থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রচারিত হলে তা ভাইরাল হয়। নিহত শাহাদাত হোসেন নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী থানার পাঁচবাড়িয়া ইউনিয়নের নদনা গ্রামের মৃত মোহাম্মদ হারুনের ছেলে। দীর্ঘদিন ধরে স্ত্রী ও মাকে নিয়ে বিআরটিসি এলাকার বয়লার কলোনিতে থাকতেন তিনি। এ ঘটনায় নিহতের চাচা হারুন ১৫ আগস্ট অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ১৩ আগস্ট বেলা ২টার দিকে কর্মস্থলের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন শাহাদাত। সন্ধ্যা ৭টার দিকে ফোন করলে কিছুক্ষণের মধ্যে বাসায় চলে আসবেন বলে স্ত্রীকে জানান। গভীর রাত পর্যন্ত বাসায় ফিরে না আসায় খোঁজাখুঁজি করেন স্ত্রী শারমিন। এ সময় শাহাদাতের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ১৪ আগস্ট রাত সাড়ে ৯টার দিকে ফেসবুকে বাদী হারুন দেখতে পান, নগরের প্রবর্তক মোড়ের অদূরে সিএসসিআর হাসপাতালের সামনের সড়কের পাশে ভাতিজা শাহাদাতের লাশ পড়ে আছে। এর আগে রাত ৯টার দিকে খবর পেয়ে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শাহাদাতকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। ওই দিন রাতেই চমেক হাসপাতালে গিয়ে পুলিশের উপস্থিতিতে শাহাদাতের লাশ শনাক্ত করেন স্ত্রী শারমীন এবং মামলার বাদী হারুন। সেদিন রাতে মৃত অবস্থায় শাহাদাতকে হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন বাদী।