জাতীয় সংবাদ

শিবিরের আত্মপ্রকাশের খবরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ মিছিল

প্রবাহ রিপোর্ট : দীর্ঘ পঁয়ত্রিশ বছর পর প্রকাশ্যে এসেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ছাত্র শিবির। গত মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞাপ্তির মাধ্যমে প্রকাশ্যে আসে তারা। এদিকে শিবিরকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত দাবি করে তাদের আত্মপ্রকাশের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষার্থীরা। পরে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিলটি বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারে এসে শেষ হয়। মিছিল পরবর্তী সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৪৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী তামিম ¯্রােতের সঞ্চালনায় শিক্ষার্থীরা বক্তব্য রাখেন। এ সময় সমাবেশে শিক্ষার্থী ফাইজা মেহজাবিন বলেন, ১৯৭১ সালের গণহত্যার সহযোগী সংগঠন জামায়াত-শিবির। শেখ হাসিনার সরকারের হাতে যেমন ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতাকে হত্যার খুনের দাগ রয়েছে, তেমনি ৭১-এর গণহত্যার রক্তের দাগও জামায়াত-শিবিরের হাতে লেগে রয়েছে। এই গণহত্যার দায় তারা অস্বীকার করতে পারে না। আশির দশকেও ছাত্রশিবির একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিকৃষ্টতম কার্যক্রম চালিয়েছে। এখন আবারও তারা পুনর্বাসিত হওয়ার দুঃসাহস দেখাচ্ছে। আমরা বারবার সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে প্রতিহত করে এসেছি। যার ফলশ্রুতিতে সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ছাত্রশিবিরকেও এদেশের ছাত্র-জনতা মেনে নেবে না। ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি অমর্ত্য রায় বলেন, ১৯৭১ এবং ২০২৪, এই দুই সালকে যারা অস্বীকার করবে তাদের কখনোই জনগণ ক্ষমা করবে না। আজকে দেখলাম, শিবির যে প্রেস রিলিজ দিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে সেখানে মিথ্যাচার করেছে। কবির, দিপু হত্যা, হুটহাট সশস্ত্র আক্রমণ এগুলো নিয়ে শিবির কখনও ক্ষমাপ্রার্থী হয় না। ছাত্রশিবিরকে কোনোদিন দেখিনি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আন্দোলন করতে, কোনোদিন কি তারা শ্রমিক হত্যা নিয়ে আন্দোলন করেছে? তারা সব সময় শাহবাগ আর শাপলা চত্বর ভাগাভাগি করতে ব্যস্ত। এরকম বিভাজনের রাজনীতি করে আওয়ামী লীগ। যে রাজনৈতিক দলের হাতে রক্তের দাগ রয়েছে সেই সংগঠনকে রাজনীতি করতে হলে বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আসতে হবে। সেটি সামাজিক বিচারও হতে পারে, আইনি বিচার হতে পারে। এজন্য ১৪ হাজার শিক্ষার্থীর কাছে ক্ষমা চেয়ে তাদের ক্যাম্পাসে আসতে হবে।
প্রকাশ্যে সুস্থ রাজনীতির চর্চা চায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন: এদিকে ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে ও সুস্থ চর্চার মতাদর্শিক লড়াইয়ের মাধ্যমে রাজনৈতিক মাঠেই সংগঠনগুলোর মূল্যায়ন হওয়া উচিত বলে জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) শাখা। গতকাল বুধবার সকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়। লিখিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২৪ এর ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে প্রাপ্ত নতুন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দেশের সব ক্ষেত্রে সংস্কার অতি আবশ্যকীয়। পুরোনো ঘুণে ধরা রাজনৈতিক কাঠামো থেকে বের হয়ে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের জন্য এখন প্রয়োজন চলমান রাজনৈতিক চর্চাসমূহের মৌলিক সংস্কার। এরই ধারাবাহিকতায় দেশে জাতীয় ঐক্য গঠন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র বিনির্মাণের উদ্দেশ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ফ্যাসিস্টবিরোধী সব রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক অংশীজনের মতামতকে গুরুত্ব দেয়। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, যে কোনো রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনের বিশ্ববিদ্যালয়ের অতীতের অমীমাংসিত ঘটনা এবং রাজনৈতিক তর্কসমূহ সর্বাঙ্গের আলোচনা সাপেক্ষে সমাধানের আগেই তাদের নতুন রূপে আবির্ভাব ঘটলে স্বভাবতই তা নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মনে করে ক্যাম্পাসে চলমান রাজনৈতিক ধোঁয়াশা ও অস্থিতিশীল পরিবেশ নিরসনে স্বচ্ছ ও সহনশীল রাজনৈতিক স্থিতাবস্থা প্রয়োজন। ছাত্রলীগকে ফ্যাসিস্ট সংগঠন আখ্যা দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্নস্থানে আমরা ফ্যাসিস্ট সংগঠন ছাত্রলীগকে নিজেদের উদ্দেশ্য সফল করতে গুপ্ত রাজনীতির অন্ধকার মাধ্যমকে বেছে নিতে দেখছি। আমরা বিশ্বাস করি নতুন ফ্যাসিস্টবিহীন রাজনৈতিক ব্যবস্থায় গুপ্ত রাজনীতির কোনো সুযোগ নেই। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় প্রকাশ্য পরিচয় ও সুস্থ চর্চার মতাদর্শিক লড়াইয়ের মাধ্যমে রাজনৈতিক মাঠেই সংগঠনগুলোর মূল্যায়ন হওয়া উচিত। সেক্ষেত্রে অগ্রাধিকারভিত্তিতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও মুক্তচর্চার বিশেষ বৈশিষ্ট্যকে মাথায় রেখে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীবান্ধব ও উদার রাজনৈতিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button