জাতীয় সংবাদ

গণমাধ্যম থেকে গঠনমূলক সমালোচনা প্রত্যাশা করি: তথ্য উপদেষ্টা

প্রবাহ রিপোর্ট : গণমাধ্যম এবং সাংবাদিকদের থেকে আমরা গঠনমূলক সমালোচনা প্রত্যাশা করি বলে উল্লেখ করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এ কথা বলেন। উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা সরকারের পক্ষ থেকে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন করেছি। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন স্বাধীনভাবেই কাজ করবে। তারা সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে একটা রূপরেখা উপস্থাপন করবে। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে আবার বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে, সেটা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবো। তিনি বলেন, সাংবাদিকতা কিংবা সংবাদ মাধ্যম এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে বিভিন্ন অংশীজন একসঙ্গে ক্রিয়াশীল। এখানে অনেক পরস্পর বিরোধী অংশীজন থাকে। ওয়েজবোর্ডের কথায় যদি বলি, তাহলে সম্পাদক, মালিক এবং রিপোর্টাররা একেক জন একেকটা পক্ষ নেবে। সবাই মিলে এক জায়গায় আসতে হবে। তিনি আরও বলেন, সাইবার সিকিউরিটি আইন বিষয়ে আমরা ইতোমধ্যে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অনন্য আইনগুলো আমাদের পর্যালোচনার মধ্যে আছে। সংস্কার কমিটিরও প্রধান কাজ হবে আইনগুলোর বিষয়ে পর্যালোচনা করা। যত কম সংখ্যক আইন এবং কম বাধা তৈরি করা যায়, ততই স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য ভালো। তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা বলেন, গত ১৬ বছরে গণমাধ্যমের ভূমিকা আসলে কি ছিল, কারা জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল, এটা সুস্পষ্ট থাকা উচিত। যদি কেউ ভুল করে থাকে কিংবা পরিস্থিতির শিকার হয় তাহলে তাকে ভুল স্বীকার করে মানুষের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে হবে। ৫ আগস্টের পর কেউ যদি ভোল পাল্টে ফেলে, এটাতো হওয়া উচিত নয়, তাকে সত্যটা স্বীকার করা উচিত। সত্যের মধ্যে দিয়ে আসলেই রিকনসিলেশন সম্ভব। নাহিদ ইসলাম বলেন, বর্তমান সরকার আসলে একটি ভিন্ন ধর্মী সরকার। সেই জায়গায় আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। আমাদের হয়তো অনেক ভুল থাকবে। আপনারা আমাদের সহযোগিতা করলে আমরা সেটা আন্তরিকভাবেই নেব। যেকোনো ধরনের সমালোচনাকে আমরা ইতিবাচকভাবেই নিচ্ছি। আমাদের প্রধান উপদেষ্টাও সেই কথাই বলেছেন। গঠনমূলক সমালোচনা হলে সেটি আমাদের জন্য উপকারী হবে, এতে আমরা নিজেদের কাজের প্রতিফলন দেখতে পাই, শুধরে নিতে পারি। সেই জায়গা থেকে গণমাধ্যম এবং সাংবাদিকতা থেকে আমরা গঠনমূলক সমালোচনা প্রত্যাশা করি। এদিকে কোনো গণমাধ্যমে হামলা-ভাঙচুর হলে মেনে নেওয়া হবে না। এমন কিছু ঘটলে সরকার অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। বিগত সরকারের সময় এ ক্ষেত্রটির ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। যে কারণে জনমনে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। সেটা স্পষ্ট করা গণমাধ্যমেরই দায়িত্ব বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। জাতীয় দুই পত্রিকা ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোর অফিসের সামনে আন্দোলন, হামলা হয়েছে। বিষয়টি গণমাধ্যমের জন্য হুমকি কি না? সাংবাদিকরা জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ল অ্যান্ড অর্ডারের যে সিচুয়েশন তৈরি হয়েছে সে জায়গা থেকে সরকার ভূমিকা পালন করবে। পত্রিকা অফিসে হামলা-ভাঙচুর হলে আমরা মেনে নেব না। অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা এটা আইনিভাবে দেখব। তিনি বলেন, এটা কেবলই আইনি বিষয় না। গত সরকারের সময় গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল। মানুষের মনেও নানা কারণে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে৷ সেটা স্পষ্ট করা সেই গণমাধ্যমের দায়িত্ব। একইসঙ্গে জনগণ সভা-সমাবেশ করলে সেটা যেন শান্তিপূর্ণ হয় সে আহ্বান আমরা জানিয়েছে। পুলিশও যেন দায়িত্বশীল আচরণ করে, শান্তিপূর্ণভাবে জনগণকে সমাবেশ করতে দেয় আমরা সেই নির্দেশনা দিয়েছি। গণমাধ্যমের ওপর যে বিক্ষোভ প্রকাশ করা হচ্ছে সেটা কি ষড়যন্ত্রের অংশ কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা বলেন, যারা আন্দোলন করছে তারাই এটা ভালো বলতে পারবে। তাদের কাছে জিজ্ঞেস করেন। তারা কেন বিক্ষোভ প্রকাশ করছে, এটা চিহ্নিত করা উচিত। এজন্য লাঠিপেটা করে সরিয়ে দেওয়া উচিত নয়। তাদের সঙ্গে কথা বললেই স্পষ্ট হয়ে যায়। নাহিদ ইসলাম বলেন, একটা মিথ্যা খবর-গুজব অনেক বড় ঘটনার জন্ম দিতে পারে। সেই জায়গায় গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের কাছ থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করছি। এই সরকার কোনো দলীয় সরকার নয়, তাদের নিজস্ব কোনো প্রচারমাধ্যম নেই। ফলে আমরা গণমাধ্যমের ওপর নির্ভরশীল। আমাদের নিজস্ব কোনো কর্মীবাহিনী নেই বা গণমাধ্যম নেই। তারা বর্তমান সরকারের কার্যক্রম প্রচার করবে। সেজন্য আমরা গণমাধ্যমের কাছে সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি। তিনি আরও বলেন, গত ১৬ বছরে একটা প্রশাসনিক ব্যবস্থা ছিল। সেটাকে রাতারাতি বদল করে একটা স্থিতিশীল জায়গায় নিয়ে আসা কঠিন। মেট্রোপলিটন পুলিশকে গ্রামে ট্রান্সফার করা হয়েছে, মফস্বলের পুলিশকে ঢাকায় আনা হয়েছে। তাদের একটু সময় লাগবে গুছিয়ে উঠতে। আর তথ্য প্রচারের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা আমাদের অনেক তথ্য নিয়ে সহায়তা করে। সে জায়গা থেকে আমরা সহায়তা কামনা করছি। সরকারের পক্ষ থেকেও সব ধরনের সহায়তা করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button