জাতীয় সংবাদ

অগ্নিঝরা মার্চ’ ৭১

মুক্তির পথে এক সাহসী অধ্যায়

এফএনএস: ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ ছিল লাগাতার অসহযোগ আন্দোলনের সপ্তদশ দিন। এই দিনে বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাসভবন পরিণত হয়েছিল মুক্তিকামী জনতার তীর্থস্থানে। প্রতিদিনের মতো এদিনও সমাজের সর্বস্তরের মানুষÑছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, সাংবাদিক, শ্রমিক, কৃষক, চিকিৎসক, নার্সসহ নানা শ্রেণি-পেশার জনগণ মিছিল সহকারে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে উপস্থিত হন। তাঁরা বঙ্গবন্ধুর প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানান এবং স্বাধীনতার জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

বিদেশি সাংবাদিকদের সামনে বঙ্গবন্ধু দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, “আমার দেশের মানুষ আজ প্রতিজ্ঞায় অটল, সংগ্রামের মন্ত্রে উজ্জীবিত। কোনো শক্তিই তাদের দমাতে পারবে না। যদি আঘাত আসে, তবে পাল্টা আঘাত হানতে হবে।”

এই সময়ে সামরিক বাহিনী দেশের বিভিন্ন স্থানে দমন-পীড়ন চালাচ্ছিল। নিরীহ জনগণের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালানো হচ্ছিল, লুটতরাজ, নির্যাতন, হত্যাযজ্ঞ চলছিল সর্বত্র। এই অবস্থায় সামরিক কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিশন গঠনের ঘোষণা দেয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধু এ তদন্ত কমিশন প্রত্যাখ্যান করেন এবং জনগণকে এর সঙ্গে কোনো ধরনের সহযোগিতা না করার আহ্বান জানান। তাঁর বক্তব্য ছিল স্পষ্টÑবাংলাদেশের জনগণ নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত চায়, সামরিক সরকারের মনগড়া তদন্ত কমিশন মেনে নেওয়া হবে না।

অসহযোগ আন্দোলনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ। নার্সিং স্কুলের ছাত্রীদের এক বিশাল মিছিল বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে এসে স্বাধীনতার স্লোগান দিলে বঙ্গবন্ধু তাঁদের স্বাগত জানান এবং আশ^াস দেন, “তোমরা স্বাধীনতা অবশ্যই পাবে।”

এ সময় মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হয় সর্বত্র। সরকারি, বেসরকারি, আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানসহ সবখানে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। দপ্তরগুলোতে কর্মীদের উপস্থিতি ছিল নামমাত্র। কারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যকেন্দ্র সবকিছু কার্যত বন্ধ ছিল। রাস্তায় রাস্তায় চলছিল প্রতিবাদ, মিছিল, শপথ গ্রহণ।

১৯ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের মধ্যে কোনো বৈঠক হয়নি। তবে আগের দুই দিন আলোচনার পরও কোনো সমাধান আসেনি। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আলোচনার নামে কালক্ষেপণ করছিল, অন্যদিকে তারা সামরিক প্রস্তুতি জোরদার করছিল। বিদেশি সাহায্যের নামে খাদ্যের বদলে তারা সৈন্য ও অস্ত্র আনছিল, যা জনমনে গভীর সন্দেহ ও ক্ষোভের জন্ম দেয়।

১৯ মার্চের ঘটনাপ্রবাহ স্পষ্ট করে দেয় যে, স্বাধীনতার সংগ্রাম অনিবার্য হয়ে উঠেছে। জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এবং পাকিস্তানি শাসকদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর দৃঢ় অবস্থান মুক্তিযুদ্ধের পথকে সুগম করে। বাঙালির চূড়ান্ত লড়াইয়ের সঙ্কেত পাওয়া যাচ্ছিল চারিদিকে। অগ্নিঝরা মার্চের প্রতিটি দিন ছিল স্বাধীনতার পথে একেকটি মাইলফলক, যা বাঙালিকে অনন্য এক জাতিতে পরিণত করেছে।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button