আবার ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ : আহত ৭

প্রবাহ রিপোর্ট : রাজধানীর সায়েন্সল্যাবরেটরি এলাকায় ফের উত্তেজনা ছড়িয়েছে ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে অন্তত সাতজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। চার ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষের কারণে নিউমার্কেট ও সায়েন্সল্যাব এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয় এবং সড়কের যান চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। এদিকে, শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ ঠেকাতে উভয় কলেজে দুইদিনের (বুধবার ও বৃহস্পতিবার) ছুটি ঘোষণা করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সকালে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা সিটি কলেজের সামনে অবস্থান নেন। এরপর উভয়পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা সিটি কলেজের মূল ফটক ও নামফলক ভাঙচুর করেন। উত্তেজিত শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দুই রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করা হয়। এদিকে, সংঘর্ষ চলাকালে উভয় কলেজের অন্তত সাতজন শিক্ষার্থী আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ তথ্য নিশ্চিত করে ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক জানান, সংঘর্ষে আহত সাতজন শিক্ষার্থী বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আহতদের মধ্যে রয়েছেন আদিব, লিয়ন, ফজলে হাসান, রাজিন, নাজমুস সাকিব, আহসান শামীমসহ আরও কয়েকজন। আহত সিটি কলেজের শিক্ষার্থী আহসান শামীম জানান, বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বাস থেকে নামার পরপরই ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এতে আমাদের অন্তত ১৪-১৫ জন আহত হয়। আমি ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছি। অন্যদিকে, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ফজলে হাসান বলেন, গত সোমবার আমাদের কলেজের এক শিক্ষার্থীকে মারধর ও অশ্লীল ছবি ধারণ করা হয়েছিল। সেই ঘটনার জের ধরেই সংঘর্ষের সূত্রপাত। সংঘর্ষ চলাকালে সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা একটি ভিআইপি বাসে ভাঙচুর চালান এবং পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। পরে পুলিশ তাদের কলেজ ভবনের ভেতরে সরিয়ে দেয়। সেখান থেকেও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম জানান, গত সোমবার সায়েন্সল্যাবে সিভিল ড্রেসে আসা এক ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়। তারই প্রতিক্রিয়ায় সংঘর্ষ হয়েছে। দুই পক্ষকে সরিয়ে দেওয়া হলেও কিছু শিক্ষার্থী পুলিশের ওপর হামলা চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করতে হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এটি নিত্যদিনের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুই কলেজকে নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগে স্থায়ী সমাধান করতে হবে। না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। বর্তমানে নিউমার্কেট ও সায়েন্সল্যাবরেটরি এলাকায় টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। সাধারণ মানুষ আতঙ্কে সড়ক এড়িয়ে চলছেন এবং যান চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে। এদিকে, সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে পরিস্থিতি শান্ত রাখতে ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজ কর্তৃপক্ষ বুধবার ও বৃহস্পতিবার (২৩ ও ২৪ এপ্রিল) দুই দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে। এর আগে, গত ১৫ এপ্রিলও দুই কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল, যেখানে কয়েকজন আহত হন এবং পুরো এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এরও আগে গত ১০ এপ্রিল সংঘর্ষে জড়ান এই দুই কলেজের শিক্ষার্থীরা। সেদিনও তাদের সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন শিক্ষার্থী আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।