‘সাদা বলের ক্রিকেটে বিশ্ব সেরা ওপেনার এখন বাটলার’

স্পোর্টস ডেস্ক : “ইজ ইট গোয়িং ইজ ইট গোয়িং? ইয়েস ইট ইজৃ হান্ড্রেড ফর জস বাটলার”, ধারাভাষ্যকক্ষে কণ্ঠের সবটুকু জোর দিয়ে যেন চিৎকার করছিলেন ইয়ান বিশপ। মুহূর্তটাই ছিল অমন উত্তেজনার। দলের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল এক রান, নিজের সেঞ্চুরির জন্য ছয়; এক শটেই তা করে ফেললেন বাটলার! মাইক্রোফোন হাতে যখন রোমাঞ্চিত বিশপরা, নিজের মাইলফলকের রোমাঞ্চে মাঠে তখন উদযাপনে উড়ছেন বাটলার। ম্যাচ শেষে রাজস্থান রয়্যালসের এই ইংলিশ ব্যাটসম্যান বড় এক স্বীকৃতি পেলেন এক কিংবদন্তির কাছ থেকে। লঙ্কান গ্রেট ও রাজস্থান রয়্যালসের ডিরেক্টর অব ক্রিকেট কুমার সাঙ্গাকারা বললেন, সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ওপেনিংয়ে বাটলারের চেয়ে ভালো কেউ বিশ্বে নেই। আইপিএলে শনিবার রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে ম্যাচটিতে রাজস্থানের জয় নিশ্চিত হয়ে যায় বেশ আগেই। শেষ দিকে কৌতূহল ছিল কেবল বাটলারের সেঞ্চুরি নিয়ে। জিততে যখন ১৮ রান বাকি, বাটলারের সেঞ্চুরির জন্য লাগে তখন ১২ রান। এই সময় একটি চার মেরে দেন শিমরন হেটমায়ার। ১৯তম ওভারে ক্যারিবিয়ান এই ব্যাটসম্যানের ব্যাট থেকে চার আসে আরেকটি। তাতে কঠিন সমীকরণে পড়ে যায় বাটলারের সেঞ্চুরি। রাজস্থানের জিততে যখন দুই রান প্রয়োজন, বাটলারের শতরানের জন্য তখন লাগে সাত রান! ১৯তম ওভারের শেষ বলে সিঙ্গেল নেন বাটলার। রাজস্থানের রান তখন বেঙ্গালুরুর সমান, বাটলারের সেঞ্চুরিতে লাগে ছয় রান। ক্যামেরন গ্রিন শেষ ওভারের প্রথম বলটি করেন শর্ট ডেলিভারি। বাটলার উড়িয়ে দিন পুল শটে। ছক্কা! নিজের শততম আইপিএল ম্যাচটি ষষ্ঠ সেঞ্চুরিতে রাঙান ৩৩ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান। চওড়া হাসিতে শূন্যে লাফিয়ে মাইলফলক উদযাপন করেন বাটলার। ম্যাচ সেরার পুরস্কার নিতে গেলেন তিনি হাসিমুখেই। পরে বললেন, শেষ শটটিতে টাইমিং ঠিকঠাক হয়নি তার। “কিছুটা ভাগ্যের সহায়তা পেয়েছি শেষে। টাইমিং খুব ভালো হয়নি, কোনোরকমে সীমানা পার হয়েছে বল। দলের জয়ে অবদান রাখতে পেরে উচ্ছ্বসিত।” তার উচ্ছ্বাসের কারণ শুধু সেঞ্চুরিই নয়, রানে ফিরতে পারাও। রাজস্থানের হয়ে মৌসুমের পর মৌসুম অসাধারণ পারফরম্যান্স তার। কিন্তু এবার শুরুটা ভালো করতে পারেননি মোটেও। প্রথম তিন ম্যাচে দল জিতলেও তার রান ছিল ১১, ১১ ও ১৩। অবশেষে দলের টানা চতুর্থ জয়ে তিনিও ফিরে পেলেন নিজেকে। শুরুটা বাজে করায় স্বস্তি পাচ্ছিলেন না তিনি। শীর্ষ পর্যায়ের ক্রিকেটে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থাকলেও এরকম সময়টা সবাইকেই চাপে ফেলে দেয়, বললেন ইংল্যান্ডের সীমিত ওভারের দলের অধিনায়ক। “যত দীর্ঘদিন ধরেই খেলাটা খেলুন না কেন, এই সময়ে দুর্ভাবনা, চাপ ঘিরে ধরেই। কখনও কখনও কাজটি সহজ নয়। স্রেফ আশা করে যেতে হয় এবং নিজেকে বলতে হয় যে ‘সব ঠিক হয়ে যাবে।’ নিজের ভালো দিকগুলি আঁকড়ে ধরে রাখতে হয়, কঠোর পরিশ্রম করে যেতে হয়। কোনো রহস্য নেই এখানে।” “পাশাপাশি কিছু ভাগ্যের সহায়তাও লাগে। ভরসা রেখে যেতে হয় যে সব ঠিক হয়ে যাবে।” বাটলারের বড় রানের অপেক্ষায় ছিল তার দলও। তবে ডিরেক্টর অব ক্রিকেট সাঙ্গাকারা বললেন, তাদের ভরসার কমতি ছিল না পরীক্ষিত এই সৈনিকের ওপর। কারণটাও তিনি ব্যাখ্যা করলেন। “সবার সঙ্গেই কখনও না কখনও আলোচনার প্রয়োজন পড়ে। তবে আলোচনা মানেই সবসময় ক্রিকেট নিয়ে বা টেকনিক নিয়ে কিংবা এই ধরনের কিছু নিয়ে নয়। ফর্মের ব্যাপারটি অনেকটাই হলো আসলে মানসিক অবস্থা।” “সাদা বলে বিশ্ব ক্রিকেটের সেরা ওপেনার জস এবং অনেক বছর ধরেই (সেরা হয়ে) আছে। সে খুবই স্মার্ট, খুব ভালো করেই জানে কীভাবে কী করতে হয়। আর কখনও কখনও আশপাশের আলোচনা এড়িয়ে তাকে নিজের মতো থাকতে দিতে হয়। জসের ক্ষেত্রে সবকিছুরই ভালো সমন্বয় ছিল আমাদের।” সাদা বলের ক্রিকেটে একটি সংস্করণ, ওয়ানডেতে অবশ্য ইংল্যান্ডের হয়ে কখনও চার নম্বরের ওপরে খেলেননি বাটলার। তবে টি-টোয়েন্টিতে ইনিংস শুরু করেন তিনি নিয়মিতই। এখানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে শুরু করে সব জায়গাতেই তার পারফরম্যান্স দারুণ। ভিরাট কোহলির ৭২ বলে ১১৩ রানের অপরাজিত ইনিংসে বেঙ্গালুরু এ দিন করেছিল ২০ ওভারে ১৮৩ রান। বাটলারের ৫৮ বলে অপরাজিত ১০০ রানের ইনিংসে রাজস্থান ৬ উইকেটে জিতে যায় ৫ বল বাকি রেখে।