পিএসজিকে উড়িয়ে দিয়ে ক্লাব বিশ^কাপের শিরোপা চেলসির

স্পোর্টস ডেস্ক : নিউ জার্সির মেটলাইফ স্টেডিয়ামে গত রোববার ক্লাব বিশ^কাপের ফাইনালে ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন পিএসজিকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়ে শিরোপা জিতেছে ইংলিশ জায়ান্ট চেলসি। কোল পালমারের জোড়া গোল এবং হুয়াও পেদ্রোর একমাত্র গোলে প্রথমার্ধেই নির্ধারিত হয়ে যায় ম্যাচের ভাগ্য।
ফাইনাল দেখতে ৮১ হাজারের বেশি দর্শক গ্যালারিতে উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প, যাঁদের উপস্থিতি ম্যাচে বাড়তি আকর্ষণ যোগ করেছিল।
ফাইনালে পিএসজি নেমেছিল সুস্পষ্ট ফেবারিট হিসেবে। টুর্নামেন্টে রিয়াল মাদ্রিদকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে তারা জায়গা করে নেয় ফাইনালে। সেই পিএসজিই ফাইনালে এসে যেন একেবারে হারিয়ে যায় চেলসির দুর্দান্ত আক্রমণে। ম্যাচের ২২ মিনিটেই এগিয়ে যায় চেলসি। মালো গুস্তোর শট প্রতিহত হলেও ফিরতি বলে কোল পালমার বাঁ পায়ের নিচু শটে গোল করেন। আট মিনিট পর আবারও গোল করেন পালমার। লেভাই কলউইলের উঁচু পাস ধরে তিনি প্রতিপক্ষের ডিফেন্স চেরা দৌড়ে ঢ়ুকে বাঁ পায়ের নিচু শটে বল জালে জড়ান।
৪৩ মিনিটে ব্যবধান ৩-০ করেন হুয়াও পেদ্রো। পালমারের পাস থেকে অফসাইডের ফাঁদ এড়িয়ে প্রথম স্পর্শেই পিএসজি গোলরক্ষক দোন্নারুম্মাকে পরাস্ত করেন ব্রাজিলিয়ান এই স্ট্রাইকার।
ম্যাচে পিএসজিও সুযোগ পেয়েছিল। তাদের মোট ৮টি শটের ৬টি লক্ষ্য বরাবর ছিল। কিন্তু চেলসির স্প্যানিশ গোলরক্ষক রবের্ত সানচেজ ছিলেন অদম্য। অসাধারণ সেভে পিএসজির একাধিক আক্রমণ ভেস্তে দেন তিনি। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে এবং দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝিতেও দারুণ দুটি সেভ করেন সানচেজ।
ম্যাচের শেষ ভাগে মাঠের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে গ্যালারিতেও। ৮৫ মিনিটে চেলসির লেফট ব্যাক মার্ক কুকুরেইয়ার চুল টেনে ধরে ফাউল করেন পিএসজির পর্তুগিজ মিডফিল্ডার জোয়াও নেভেস। রেফারি ভিএআরের সাহায্যে নেভেসকে সরাসরি লাল কার্ড দেখান। এর পর দুই দলের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শেষ বাঁশি বাজার পর লুইস এনরিকের সঙ্গে চেলসির কয়েকজন খেলোয়াড়ের কথা কাটাকাটি হয়। এমনকি চেলসির হুয়াও পেদ্রোর কাঁধ ধরে টানতে দেখা যায় পিএসজি কোচ এনরিকেকে।
ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে খেলোয়াড়দের হাতে মেডেল এবং চ্যাম্পিয়ন ট্রফি তুলে দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ক্লাব বিশ^কাপের শিরোপা জিতে চেলসি পকেটে ভরেছে ১২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রিমিয়ার লিগে চতুর্থ স্থানে শেষ করায় তাদের চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলা ইতোমধ্যেই নিশ্চিত হয়েছে। মৌসুমে উয়েফা কনফারেন্স লিগ জয়ের পর এবার ক্লাব বিশ^কাপের মতো মর্যাদাপূর্ণ শিরোপা ঘরে তোলায় চেলসি শিবিরে স্বস্তির নিঃশ^াস। চেলসি কোচ এনজো মারেসকা বলেন, “ক্লাব বিশ^কাপের চ্যাম্পিয়ন হওয়া আমাদের জন্য বিশাল গর্বের বিষয়। পিএসজির মতো দলকে হারিয়ে এই শিরোপা জয় বিশেষ সাফল্য। কোল পালমারের মতো খেলোয়াড়দের থেকে এমন বড় মঞ্চেই পারফরম্যান্স আশা করি, কারণ বড় মুহূর্তেই নিজেকে প্রমাণ করতে হয়।”
কোল পালমার বলেন, “দারুণ লাগছে। সবাই আমাদের নিয়ে সন্দেহ করছিল। আমরা জানতাম, আমাদের সেরাটা দিতে হবে। তাই এভাবে খেলতে পেরে আনন্দিত।”
অন্যদিকে, পিএসজির জন্য এটি হতাশার এক পরিসমাপ্তি। চ্যাম্পিয়নস লিগ, লিগ এবং ফ্রেঞ্চ কাপ জেতা দলটি মৌসুম শেষ করতে চেয়েছিল ক্লাব বিশ^কাপ জয়ে। অথচ প্রথমার্ধেই ম্যাচ হাতছাড়া হয়ে যায়। ফাইনালে ৩-০ গোলে পিছিয়ে পড়ার নজির এর আগে তিনবারই পিএসজির ইতিহাসে ঘটেছিল, তবে সেসব ম্যাচে ফিরে জিতলেও এবার আর সম্ভব হয়নি।
চেলসির কাছে হেরে পিএসজি শিরোপা হাতছাড়া করলেও অর্থনৈতিকভাবে তারা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ছে না। তবে মৌসুমের শেষ ট্রফি না পাওয়ার বেদনা তাদের প্রেরণায় ধাক্কা দিয়েছে। লুইস এনরিকের দল এখন কিছুটা বিশ্রামের পর টটেনহ্যাম হটস্পারের বিপক্ষে উয়েফা সুপার কাপ দিয়ে নতুন মৌসুম শুরু করতে চায়।
মেটলাইফ স্টেডিয়ামের সেই উত্তপ্ত ফাইনালে বড় মঞ্চে নিজের সেরাটা মেলে ধরলেন কোল পালমার। মৌসুমের শুরুতে যিনি ক্লাব পরিবর্তন করেছিলেন, তিনিই নতুন ঠিকানায় এনে দিলেন চেলসির জন্য মৌসুমের সবচেয়ে বড় উৎসব।