স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো দলীয় প্রতীকের বাইরে হওয়া উচিত
৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এবার পর্যায়ক্রমে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ৪৯২ টি উপজেলায় পর্যায়ক্রমে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রথম দফার নির্বাচন তফসিল কিছু দিনের মধ্যে ঘোষণা করা হতে পারে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো নির্বাচনে অংশ নেয় নি। সরকারি দল আওয়ামী লীগ সহ সমমনা দলগুলো নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়নের বাইরে দলীয় নেতা কর্মীদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ দিয়েছে ভোটার উপস্থিতি বাড়াবার জন্য। ভোটার উপস্থিতি নিয়ে বিতর্ক থাকলেও নির্বাচন পরবর্তী সময়ে মনোনীত প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কর্মী সমর্থকদের মাঝে সহিংস ঘটনা ঘটেছে ব্যাপক ভাবে। এতে দল স্থানীয় ভাবে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এজন্যে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ার চিন্তা করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অর্থাৎ কাউকে নৌকা প্রতীক দেওয়া হবে না। এ ক্ষেত্রে দলের যে কেউ অনেকটা স্বতন্ত্র প্রার্থীর মতো ভোট করতে পারবেন। দলের নেতা-কর্মীরাও যার যার পছন্দমতো প্রার্থীর পক্ষে ভোট করতে পারবেন। উপজেলা নির্বাচন দলীয় প্রতীক থাকবে কি না, এ ব্যাপারে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয় নি। তবে বিএনপিসহ বিরোধী দল স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও দলীয় ভাবে অংশ নেবে না বলে ধারণা করা যায়। এ পরিস্থিতিতে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া না দেওয়া খুব একটা বেশি গুরুত্ব বহন করেনা, বরং একজনকে প্রতীক দিলে অন্যরা বিরোধিতায় নামেন। এতে দলের বিভেদ বাড়ে। ২০১৫ সালে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আইন প্রণয়নের পর থেকে স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার করে আসছে রাজনৈতিক দলগুলো। উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে এবং পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন মেয়র পদে দলীয় ভাবে মনোনয়ন দেওয়ার নিয়ম এখনো বিদ্যমান। ভাইস চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর ও সদস্য পদে যার যার মতো করে অংশ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে সব ক্ষেত্রেই দলের মনোনীত প্রার্থীর বাইরেও আওয়ামী লীগের বিপুল সংখ্যক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুসারে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার পর কেউ এর বিরোধিতা করে নিজে নির্বাচন অংশ নিলে বা অন্য কারো পক্ষে ভোট করলে তাকে দল থেকে সরাসরি বহিষ্কার করা হয়। ২০১৫ সালের পর সব ধরনের নির্বাচনে দলের বিরুদ্ধে অবস্থান দেওয়া নেতাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে এবার জাতীয় নির্বাচনে দল সিদ্ধান্ত নিয়েই স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দিয়েছে। ফলে গঠনতন্ত্রের এ ধারা প্রয়োগ করা হয়নি। ২০১৬ সালে স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে নিচের স্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে ভোট হয়। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপুল সংখ্যক নেতা চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় জয়ী হন। ফেনী ও বাগেরহাটে অধিকাংশ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান ও সদস্য পদে সব গুলোতেই ভোট করতে হয় নি। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী অভ্যন্তরীণ কোন্দলে আওয়ামী লীগের শতাধিক নেতা-কর্মীর প্রাণহানি ঘটে। এবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও একই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের প্রতি অনেকেরই অনীহা রয়েছে। কিন্তু তারপরও দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেরিতে হলেও যে শেষ পর্যন্ত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বুজতে পেরেছে দলীয় মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্ররা শক্ত অবস্থান নিলে দলের মধ্যে অন্তকলোহ, বিবাদ ও বিভক্তি ঘটে। যা দলের জন্য ক্ষতিকর। আমরাও চাই স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো দলীয় প্রতীকের আইনে যার যার অবস্থান থেকে অংশ নিক। তাতে দলীয় কোন্দল যেমন নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, তেমনি জনগণ ও তাদের ইচ্ছেমতো তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারবেন।