সম্পাদকীয়

ধ্বংস হচ্ছে তরুণ প্রজন্ম

স্মার্ট ফোন আসক্তি

বর্তমান বিশ্বে দৈনন্দিন জীবনের অন্যতম প্রয়োজনীয় বস্তু হচ্ছে স্মার্ট-ফোন। পড়াশোনা থেকে শুরু করে প্রাত্যহিক সব কাজেই এর ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। আধুনিক যুগে স্মার্ট-ফোন ছাড়া জীবনযাত্রা ভাবাই যায় না। কিন্তু এই অপরিহার্য বস্তুটিই হয়ে উঠছে ক্ষতিকারক আসক্তি। স্মার্ট-ফোন আসক্তি সৃষ্টিকারী একটি যন্ত্র। এটি এমনভাবেই বানানো হয় যেন সব সময় এটি নাড়াচাড়া করতে ইচ্ছে করে। ফোনের সঙ্গে ইন্টারনেট যুক্ত হয়ে আসক্তির উপাদান বাড়িয়ে দেয়। এগুলো শুধু শিশু নয়, যে কোনো মানুষকেই আকর্ষণ করে। একবার দেখতে শুরু করলে এক ধরনের নেশা তৈরি হয়। মানুষকে টেনে নিয়ে যায় আসক্তির দিকে। এই আসক্তি মানুষের মনোজগতে মারাত্মক প্রভাব তৈরি করে। এমন নির্ভরশীলতা তৈরি করে যা থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন। কেউ চাইলেও অবচেতন মন তাতে বাধা দেয়। মাদকাসক্তির মতোই আসক্তি তৈরি করছে স্মার্ট-ফোন। এই আসক্তিতে প্রধানত আক্রান্ত হচ্ছে তরুণ সমাজ। বর্তমানের তরুণ সমাজ তাদের বিনোদনের প্রধান মাধ্যম হিসেবে খুঁজে নেয় স্মার্ট-ফোনকে। যা পরবর্তীতে রূপ নেয় ভয়ানক আসক্তিতে। যা শারীরিক ক্ষতি থেকে শুরু করে মানসিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে আসক্ত ব্যক্তির। স্মার্ট-ফোন আসক্তি সৃষ্টিকারী একটি যন্ত্র। এটি এমনভাবেই বানানো হয় যেন সব সময় এটি নাড়াচাড়া করতে ইচ্ছে করে। ফোনের সঙ্গে ইন্টারনেট যুক্ত হয়ে আসক্তির উপাদান বাড়িয়ে দেয়। এক প্রতিবেদনে দেখা যায় ডিভাইসগুলোর দিকে একটানা তাকিয়ে থাকা সামাজিক আর শারীরিক উভয় ক্ষেত্রেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই আসক্তির একটি অন্যতম বহিঃপ্রকাশ হলও নোমোফোবিয়া বা হাতের কাছে স্মার্ট-ফোন না থাকার ভয়। অন্য এক জরিপে দেখা যায় তরুণরা এখন মুঠোফোনকে তাদের শরীরের অঙ্গ বলে মনে করে। স্বাভাবিক ব্যক্তিদের চেয়ে মুঠোফোনে আসক্ত ব্যক্তিদের উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। শতকরা ৬৩ ভাগ মানুষ ঘুম থেকে উঠেই স্মার্ট-ফোনে আগে চোখ রাখে। দৈনিক ৬ ঘণ্টার বেশি সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যয় করেন ২৭ শতাংশ তরুণ তরুণী। ২৬ দশমিক ৪ শতাংশ দৈনিক ৪-৬ ঘণ্টা ও ৩১ দশমিক ১ শতাংশ তরুণ-তরুণী দৈনিক ২-৪ ঘণ্টা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করেন। দৈনিক সর্বোচ্চ ২ ঘণ্টা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করেন ১৪.৯ শতাংশ। অন্য এক জরিপে দেখা যায়, স্মার্ট-ফোনের কারণে খুব কম বয়সেই শিশু-কিশোররা পার্নোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে পড়ছে। রাজধানীর ৭৭ শতাংশ স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে পর্নোগ্রাফি-আসক্তি তৈরি হয়েছে। যার ফলে তাদের মধ্যে বিকৃত যৌনাচারের প্রবণতা তৈরি হয়েছে আশঙ্কাজনক হারে। এতে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা। ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। পাশাপাশি তরুণরা ধীরেধীরে হারাচ্ছে সৃজনশীলতা। যা কিনা দেশের ভবিষ্যতের জন্য হুমকি স্বরূপ। তাই এখনি সবাইকে সচেতন হতে হবে। এই ভয়ানক আসক্তির বিরুদ্ধে গড়ে তুলতে হবে কঠোর প্রতিরোধ। এ আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে হলে দরকার কঠোর সদিচ্ছার। পাশাপাশি অভিভাবকদের ও হতে হবে সচেতন। তাহলেই তরুণ প্রজন্ম মুক্ত পাবে এই আসক্তি থেকে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button