সম্পাদকীয়

রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলায় নির্যাতনের শিকার হচ্ছে শিক্ষার্থী

শিক্ষার্থীরা জীবনমান উন্নয়ন করতে শিক্ষাগ্রহণ করে থাকে। আর শিক্ষা গ্রহণ করতে শিক্ষার্থীরা স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি ইত্যাদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত থাকেন। মূলত শিক্ষার্থীরা শিক্ষা অর্জনের লক্ষ্যই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সম্পৃক্ত হয়ে থাকেন। শিক্ষার্থীরা সঠিকভাবে শিক্ষার আলোই আলোকিত হচ্ছে কি না তা নিয়ে আছে অনেকের মত-দি¦মত। এর মূল কারণ হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক অপব্যবহার। আমাদের দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে রাজনৈতিক কর্মকা- জড়িত। বিশেষ করে উচ্চশিক্ষার শিক্ষার্থীরা বেশির ভাগ জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। যার ফলে বিগত বছর গুলো থেকে শিক্ষাখাতে বিশৃঙ্খলা চলছেই। তবে এভাবেই চলবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান? প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে! সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ‘সোচ্চার-টর্চার ওয়াচডগ’ বাংলাদেশের প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানা যায়, বাংলাদেশের ক্যাম্পাসগুলোতে গত ১৫ বছরে যেসব নির্যাতনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে তার মধ্যে ৭৮ শতাংশ শিক্ষার্থী রাজনৈতিক ট্যাগে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া ১৪ শতাংশ শিক্ষার্থী ইসলামি ছাত্রশিবির ও ২ শতাংশ শিক্ষার্থী ছাত্রদলের রাজনীতি করার কারণে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। নির্যাতিত হওয়া ৫০ জন ভিক্টিমের সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে সোচ্চার-টর্চার ওয়াচডগ বাংলাদেশ এ প্রতিবেদন তৈরি করেন। গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ২৬ শতাংশ শিক্ষার্থী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮ শতাংশ ও বুয়েটে ১৬ শতাংশ শিক্ষার্থী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ২০১৭ সালে সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া সবচেয়ে বেশি নির্যাতনে এ বছরের আগস্ট মাসেই ঘটেছে। এ নির্যাতন বন্ধ করতে হলে সরকারি কমিশন গঠন করে তদন্ত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা তদন্ত কমিটি ও প্রাতিষ্ঠানিক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়াও প্রথম বর্ষের ছাত্রদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির জন্য বিধিমালা তৈরি করা, ছাত্ররাজনীতির সংস্কার, হলগুলোতে ছাত্ররাজনীতি মুক্ত করা, ইনক্লুসিভ ক্যাম্পাস সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ ও আবাসনের সংকটের সমাধান করতে হবে। পাশাপাশি বিগত বছরগুলোতে যত অন্যায় অত্যাচার এবং হত্যাযজ্ঞ হয়েছিল সেসব অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা এবং শিক্ষকদের রাজনীতি বন্ধের বিষয়েও গুরুত্ব দিতে হবে। এই যৌক্তিক পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নে দরকার অন্তর্বর্তী সরকারকে জরুরি উদ্যোগী হওয়া। আমরা আশা করব, অন্তর্বর্তী সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা নিরসন করে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মাঝে স্বস্তি ফিরিয়ে আনবেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button