হজের খরচ যৌক্তিক হতে হবে
ইসলামের অত্যাবশ্যকীয় বিধান হজের মাধ্যমে মানুষ আত্মশুদ্ধি অর্জন করে। মানুষের মনের দুষ্টু প্রবৃত্তি অবদমিত হয়। জীবনাচরণে পরিমিতিবোধ আসে। সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে অবস্থিত মুসলমানদের কিবলা কাবাঘরকে কেন্দ্র করেই হজের বিধানাবলি প্রবর্তিত হয়। হজের মৌসুমে পবিত্র মক্কা নগরীতে যাওয়া-আসা এবং ওই সময়ে পরিবারের ব্যয়ভার বহনে সক্ষম হলে এবং দৈহিক সক্ষমতা থাকলে জীবনে একবার হজ করা ফরজ। পার্থিব জীবন সুন্দর করার ক্ষেত্রে হজের ভূমিকা অনন্য। হজের মাধ্যমে মানুষ আত্মশুদ্ধি অর্জন করে। হজ পালনের সময় মানুষের মধ্যে দূরত্ব ব্যবধান কমে। যথানিয়মে ধর্মকর্ম পালনে নাগরিকদের সহায়তা করা রাষ্ট্রের দায়িত্বের অংশ। কিন্তু বর্তমানে খরচ অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় হজ করার সামর্থ্য হারিয়েছেন অনেকে। করোনাভাইরাস মহামারি শেষে সারা বিশ্বে বিমান ভাড়া লাফ দেওয়ার পাশাপাশি সৌদি সরকারের খরচ বৃদ্ধি, খাদ্য ও আনুষঙ্গিক অনেক কিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ থেকে হজের খরচও দেয় লাফ। খরচ এতটাই বেড়ে গেছে যে, বাংলাদেশ থেকে যত যাত্রীর হজ করার অনুমতি আছে, গত দুই বছর সেই পরিমাণ যাত্রী যায়নি। নিবন্ধন করেও না যাওয়ার পেছনে কারণ হিসেবে অর্থের চাপের কথাই জানিয়েছেন অনেকে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ প্যাকেজ ধরা হয় ছয় লাখ ৮৩ হাজার টাকা। বেসরকারি প্যাকেজে খরচের সর্বনি¤œ খরচ ছিল ছয় লাখ ৭২ হাজার টাকা। এ নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার ২০২৪ সালে খরচ অনেকটাই কমিয়ে আনে। এক লাখ চার হাজার টাকা কমিয়ে সরকারি প্যাকেজে সর্বনি¤œ মূল্য পাঁচ লাখ ৭৯ হাজার টাকা এবং বেসরকারি প্যাকেজে সর্বনি¤œ পাঁচ লাখ ৯০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়। গত ৫ আগস্ট তীব্র গণ আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর যে অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নেয়, তারা খরচ আরও কমানোর কথা বলে। গত ২৯ আগস্ট উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে পরিবেশ ও বন উপদেষ্টা সৈয়দ রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদেরকে বলেন, “হজের মত পবিত্র কাজেও একটি সিন্ডিকেট দেখতে পাই। তারা কারসাজি করে হজের প্যাকেজ মূল্য বাড়িয়ে তোলে। হজের যে খরচ, সেটি যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনা যায় সেজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে। কত হতে পারে কত কমানো যেতে পারে সেই আলোচনা হয়েছে। হজের মতো একটি পবিত্র কাজেও থাকে সিন্ডিকেটের যোগসাজশ। এ সংঘবদ্ধ চক্রের দৌরাত্ম্যে হজযাত্রীদের অতিরিক্ত ব্যয় করতে হয়। হজের মতো একটি আবশ্যকীয় পবিত্র ইবাদতকে বাড়তি আয়ের উৎস বানিয়ে ফেলা এবং মুসলমানদের জন্য হজ পালনকে কঠিন করে তোলা কোনোভাবেই ঠিক নয়। তাই সরকারকে এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।