সম্পাদকীয়

তরুণদের সম্ভাবনা যেন না হারায় ‘বেকারত্বের ফাঁদে’

বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় তরুণ জনগোষ্ঠীর দেশ। জাতীয় জনসংখ্যা ও গৃহগণনা ২০২২ অনুযায়ী, দেশের প্রায় ৪৫ শতাংশ মানুষ ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী-যারা কর্মক্ষম, উদ্যমী এবং জাতির অগ্রগতির প্রধান চালিকাশক্তি। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, এই যুবশক্তির একটি বড় অংশ আজ কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা থেকে বঞ্চিত। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে বেকারের সংখ্যা ২৭ লাখেরও বেশি, এবং শুধু গত এক বছরেই বেড়েছে দেড় লাখ। এই পরিসংখ্যান কেবল সংখ্যার বিবরণ নয়, এটি তরুণ সমাজের হতাশার প্রতিচ্ছবি। প্রতি বছর প্রায় ২২ লাখ তরুণ শ্রমবাজারে প্রবেশ করলেও, তাদের বড় অংশই যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও উপযুক্ত চাকরি পাচ্ছে না। যেসব চাকরি মেলে, সেগুলোর অধিকাংশই স্বল্প বেতন ও নিরাপত্তাহীন-বিশেষত বেসরকারি খাতে। আর সরকারি চাকরির সীমিত সুযোগে প্রতিযোগিতা এতই তীব্র যে, হাজার হাজার শিক্ষিত তরুণ বছরের পর বছর শুধু বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতিতেই আটকে থাকেন। তরুণদের এ স্থবিরতার আরেক কারণ শিক্ষা ব্যবস্থার অকার্যকারিতা। শিক্ষাব্যবস্থা এখনো কর্মমুখী নয়। বাস্তবমুখী দক্ষতা, কারিগরি ও ভোকেশনাল জ্ঞান অর্জনের সুযোগ সীমিত। ফলে ¯œাতক বা ¯œাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েও তরুণরা অনেক ক্ষেত্রেই চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েন। হতাশাজনকভাবে, অনেক কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান এখন দেশীয় তরুণদের বদলে বিদেশি কর্মী নিয়োগ করছে-শুধু দক্ষতার অভাবে। এই প্রেক্ষাপটে উদ্যোক্তা হওয়ার বিকল্প ভাবতে পারেন অনেক তরুণ। কিন্তু সেখানেও বাধার শেষ নেই-মূলধনের অভাব, ব্যাংক লোন পেতে জটিলতা, পারিবারিক অনুপ্রেরণার ঘাটতি এবং সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির গোড়ামি অনেক তরুণকে শুরুতেই নিরুৎসাহিত করে। “চাকরি না পেয়ে ব্যবসা করছে” জাতীয় মন্তব্য এখনো সমাজে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয়। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে প্রয়োজন একটি সমন্বিত কৌশল। শিক্ষাব্যবস্থাকে আধুনিক ও কর্মমুখী করতে হবে। এছাড়াও কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় তরুণদের আগ্রহ বাড়াতে ব্যাপক প্রচার ও সুযোগ তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি উদ্যোক্তা তৈরির জন্য তরুণবান্ধব ঋণনীতির পাশাপাশি সহায়ক প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রয়োজন। সবচেয়ে বড় কথা, তরুণদের শুধু “চাকরিপ্রার্থী”হিসেবে না দেখে “মানবসম্পদ”হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। কেননা, দেশের উন্নয়নের চালিকা শক্তি এই তরুণরাই। তারা যেন না হারিয়ে যায় বেকারত্বের ফাঁদে, সেটাই হতে হবে রাষ্ট্রের অন্যতম অগ্রাধিকার।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button