রূপালী ট্রান্সপোর্টের বেপরোয়া চলাচল: জননিরাপত্তা ও শৃঙ্খলায় সংকট

কুমিল্লা-হোমনা সড়ক বর্তমানে এক ভয়াবহ সংকটের মুখে। লাইসেন্স ও পারমিট বিহীন রূপালী ট্রান্সপোর্টের যাত্রীবাহী বাসগুলোর বেপরোয়া চলাচল জনসাধারণের জীবনকে প্রতিনিয়ত ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। শাসনগাছা থেকে হোমনা সড়কে এসব বাসের বেপরোয়া গতি ও অদক্ষ চালনার ফলে দুর্ঘটনা যেন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি চান্দিনার কুটুমপুরে এক নারীর প্রাণহানির ঘটনা এই সমস্যার তীব্রতাকেই সামনে এনে দিয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, রূপালী বাস চালকরা রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছেন। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা পেরিয়ে, যাত্রী বোঝাই বাস বেপরোয়া গতিতে চালানো হচ্ছে। আর এসব বাস চালকেরা নিজেদের দায় এড়িয়ে বলছেন, সড়কে যানবাহনের গতি স্বাভাবিক এবং অদক্ষ চালকেরাই মূলত দায়ী। এমন আত্মসন্তুষ্ট মনোভাব শুধু হতাশাজনকই নয়, উদ্বেগজনকও। এখানেই শেষ নয়। প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, কিছু রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তি এই অবৈধ যান চলাচলকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। গাড়িগুলোর নেই বৈধ রোড পারমিট, কুমিল্লার কোনো কাগজপত্রও নয়। ঢাকার রেজিস্ট্রেশন দিয়ে মিনিবাসগুলো চলাচল করছে স্থানীয় সড়কে। স্থানীয় পরিবহন মালিক সমিতি এসব কার্যক্রমকে অবৈধ বলে আখ্যায়িত করলেও, এখনো কার্যকর ব্যবস্থা দেখা যাচ্ছে না। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো এই সংকট নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। হাইওয়ে পুলিশের ভূমিকাও প্রশ্নবিদ্ধ। দুর্ঘটনার পর চালকদের শুধু অর্থদ- দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে, যা দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর কোনো দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয়। এ পরিস্থিতিতে জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বিআরটিএ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের। অবিলম্বে অবৈধ পারমিটবিহীন যানবাহনের চলাচল বন্ধ করতে হবে। একইসাথে, যাত্রী নিরাপত্তা ও সড়ক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে চালকদের প্রশিক্ষণ, সড়ক মনিটরিং ও নিয়মিত অভিযান জরুরি। অবৈধ পরিবহন চলাচলের এই সংস্কৃতি বন্ধ না হলে শুধু দুর্ঘটনা নয়, পরিবহন খাতে বিশৃঙ্খলা, যাত্রী হয়রানি ও সামাজিক অস্থিরতা বাড়বে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, প্রশাসনিক কড়াকড়ি এবং জনগণের সম্মিলিত আওয়াজই হতে পারে একটি নিরাপদ, শৃঙ্খলিত সড়কের পথনির্দেশ।