সম্পাদকীয়

বাল্যবিবাহ রোধ করতে হবে

বর্তমানে সমাজে যেসব সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে তার মধ্যে বাল্যবিবাহ অন্যতম। দরিদ্রতা, নিরক্ষরতা ও সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি- এসব কারণে মেয়েদের উপার্জনে অক্ষম হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এ রকম আরও অনেক কারণে মেয়েরা বাল্যবিবাহের শিকার হয়। বাংলাদেশের অনেক পরিবার অর্থনৈতিক সংকটের কারণে তাদের মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দেয়। বাল্যবিবাহকে প্রায়ই আর্থিক বোঝা কমানোর এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা উন্নত করার উপায় হিসেবে দেখা হয়। বাংলাদেশে প্রচলিত পিতৃতান্ত্রিক রীতিনীতি এবং লিঙ্গ বৈষম্য কন্যাসন্তান ও নারীদের অবমূল্যায়নের দিকে নিয়ে যায়। বাল্যবিবাহকে প্রায়ই মেয়েদের সতীত্ব ও সম্মান রক্ষার উপায় হিসেবে দেখা হয় এবং তাদের স্বাধীনতা ও চলাফেরা সীমিত করা হয়। বাল্যবিবাহ বাংলাদেশে একটি গুরুতর সামাজিক সমস্যা। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় এখানে বাল্যবিবাহের হার সবচেয়ে বেশি। ইউনিসেফ এর তথ্যানুযায়ী বাংলাদেশে ৫৯ শতাংশ মেয়ের ১৮ বছর বয়সের আগে বিয়ে হয়, এবং ২২ শতাংশের ১৫ বছর বয়সের আগে বিয়ে হয়। বাল্যবিবাহ মেয়েদের উপর স্বাস্থ্য সমস্যা সহ বিভিন্ন নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বাল্য বিবাহের কারণে তাদের শিক্ষার সুযোগ সীমিত হওয়া, গার্হস্থ্য সহিংসতা বৃদ্ধিসহ নানা ধরনের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। জরিপের তথ্য বলছে, দেশের বিভিন্ন জেলায় ৪৪ দশমিক ৭ শতাংশ মেয়ে ১৮ বছরের আগেই বাল্যবিবাহের শিকার হয়। গবেষণায় দেখা যায়, বাল্যবিবাহের শিকার মেয়েদের ৬ দশমিক ৯ শতাংশের বয়স ১৫ বছরের নিচে। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে পিরোজপুর, সেখানে বাল্যবিবাহের হার ৭২ দশমিক ৬ শতাংশ। বাল্যবিবাহের হার সবচেয়ে কম নেত্রকোনায়-২৪ দশমিক ১ শতাংশ। বাল্যবিবাহের শীর্ষে থাকা অন্য জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ (৬৫ দশমিক ২ শতাংশ), নওগাঁ (৬৫ দশমিক ২ শতাংশ), ঠাকুরগাঁও (৬২ দশমিক ৫ শতাংশ) এবং জয়পুরহাট (৬১ দশমিক ৪ শতাংশ)। এ ছাড়া যোগ্য পাত্র পাওয়ার কারণে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন ৪৪ শতাংশ অভিভাবক। বাল্যবিবাহের কারণ হিসেবে ১৮ শতাংশ দারিদ্র্য, যৌতুক কম বা না চাওয়ার কারণে ১০ শতাংশ, সামাজিক নিরাপত্তার অভাবের কথা বলছেন ৭ শতাংশ, পড়ালেখায় ভালো না হওয়ার কারণে ৬ শতাংশ এবং অন্যান্য কারণের কথা বলেছেন ১৫ শতাংশ। বাল্যবিবাহ থেকে মেয়েদের রক্ষা করে এমন আইন ও নীতিগুলিকে শক্তিশালী ও কার্যকরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে মেয়েদের বিয়ের নূন্যতম যে বয়স (১৮ বছর) নির্ধারণ করা আছে তা যথাযথভাবে অনুসরণ করা এবং আইন লঙ্ঘনকারীদের শাস্তি প্রদান করা। এরসঙ্গে যারাই জড়িত তাদের সবাইকে আইনের আওতায় এনে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে যাথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তাহলেই কেবল বাল্য বিবাহ রোধ করা সম্ভব।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button