সম্পাদকীয়

রেলে নাশকতায় বাড়ছে আতঙ্ক

সরকারের পদত্যাগ ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে অনেকদিন ধরেই আন্দোলন করে আসছে বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলো। এরই অংশ হিসেবে গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সমাবেশ ডেকেছিল প্রায় দেড় যুগ ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি। কিন্তু কিছু সময় পরই পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়ালে মহাসমাবেশ প- হয়ে যায়। এরপর থেকে একের পর এক হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি। এসব কর্মসূচি ঘিরে ঢাকাসহ সারাদেশে অনেক গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। হরতাল-অবরোধে দূরপাল্লার গাড়ি কম চললেও ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক ছিল। যাত্রার নিরাপদ বাহন হিসেবে অনেকে অবরোধেও ট্রেনে যাতায়াত করেন। কিন্তু কয়েকদিন ট্রেনে নাশকতা বেড়ে যাওয়ায় যাত্রীদের জন্য ‘ভয়ংকর’ হয়ে উঠেছে ট্রেনযাত্রা। হামলার আতঙ্ক নিয়েই ট্রেনে চলাচল করছে সাধারণ যাত্রীরা।
নাশকতা প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকলেও বিচ্ছিন্নভাবে নাশকতার ঘটনা ঘটছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনব্যবস্থা ও সরকার পতনের আন্দোলনের নামে এরই ছায়া ক্রমবিস্তৃত হচ্ছে। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির নীতি-রীতিসিদ্ধ পথ পরিহার করে যে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি ক্রমেই প্রকট হয়ে উঠছে, তা কোনোভাবেই চলতে পারে না। স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ, নিরাপদ সমাজব্যবস্থা নিশ্চিত করার দায় শুধু রাষ্ট্রশক্তি কিংবা প্রশাসনেরই নয়, নিবন্ধিত প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলেরই এ ব্যাপারে যে কম-বেশি দায় রয়েছে। রাজনীতি, নির্বাচন, চলমান আন্দোলনকেন্দ্রিক সহিংসতা জনজীবনে যে আতঙ্কের ছায়া প্রলম্বিত করেছে এর নিরসনের দায় রাজনীতিকদেরই।
রাজনৈতিক সংকটের সমাধান রাজনৈতিকভাবেই করতে হবে, কোনোভাবেই জনজীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলে নয়। এমনকি যথাযথ অনুশীলনের মাধ্যমে রাজনীতিকে পরিশীলিত করার পাশাপাশি জনকল্যাণের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম করার বিষয়ে মনোযোগ না বাড়িয়ে যে ঘৃণ্য পথ অবলম্বন করে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকারের সংজ্ঞায়িত করার অপচেষ্টা হচ্ছে তা-ও কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তাই তদন্তক্রমে দ্রুত নাশকতাকারীদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তযোগ্য বিচারের আওতায় আনার বিকল্প নেই। কোনোভাবেই তাদের ছাড় নয়। আমরা আশা করি, নাশকতা ঘটিয়ে মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিতে যারা এত বড় পরিকল্পনা করে, তাদের দ্রুত খুঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। সেই সঙ্গে রেলওয়ের নিরাপত্তায় বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button