সম্পাদকীয়

পাসপোর্ট অফিসে দুর্নীতি বন্ধে কঠোর হোন

ভুগছে সাধারণ মানুষ

পাসপোর্ট প্রাপ্তি নাগরিক অধিকারগুলোর অন্যতম। অথচ এ অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে অনিয়ম-হয়রানির শিকার হচ্ছে আমাদের দেশের মানুষ। পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রতিনিয়তই নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছে তারা। অভিযোগ রয়েছে- দেশের দুর্নীতিগ্রস্ত খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হলো পাসর্পোট খাত। পাসপোর্ট অফিসের আঞ্চলিক অফিসগুলো যেন দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এসব অফিসে অলিখিতভাবে দালাল নিয়োগ দিয়ে প্রকাশ্যে চলে ঘুষের কারবার। জানা যায়, নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও চট্টগ্রাম বিভাগীয় অফিস থেকে গণহারে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) নবায়ন করা হয়। এ ঘটনায় বিভাগীয় তদন্ত শুরু হলে বাধা দেয় দুর্নীতিবাজ চক্র। এমনকি অপকর্ম ঢাকতে ঘুষ বাণিজ্যের সাক্ষীদের অপহরণও করা হয়। খোদ পাসপোর্ট অধিদপ্তরের নিজস্ব তদন্তে দুর্নীতির এমন ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। সরকার ই-পাসপোর্ট চালু করার পর সুযোগসন্ধানীরা এমআরপি নবায়নের নামে এমন রমরমা ঘুষ বাণিজ্যে মেতে উঠেছে। বিশেষ করে জাতীয় পরিচয়পত্রে তথ্যগত জটিলতার কারণে যারা ই-পাসপোর্ট করাতে পারছেন না, তারাই হচ্ছেন এর শিকার। ই-পাসপোর্ট এড়িয়ে মোটা অঙ্কের ঘুসের বিনিময়ে তারা নবায়ন করিয়ে নিচ্ছেন পুরোনো পাসপোর্ট। প্রশ্ন হলো, পাসপোর্ট অফিসে দুর্নীতি বন্ধ হচ্ছে না কেন? ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে সদিচ্ছা থাকলে তো এমনটি হওয়ার কথা নয়। উদ্বেগের বিষয় হলো, যেসব অপরাধী ও রোহিঙ্গা জাল-জালিয়াতি করে জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়াই ভুয়া জন্মনিবন্ধন দিয়ে এমআরপি করিয়েছিল, তারাও এখন ঘুসের বিনিময়ে এমআরপি নবায়ন করিয়ে নিচ্ছে। তাছাড়া বিদেশে আত্মগোপনে থাকা প্রভাবশালী রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীরাও ঢাকা থেকে এমআরপি নবায়ন করিয়ে নিচ্ছেন বলে ইতঃপূর্বে খবর বেরিয়েছে। ভুলে গেলে চলবে না, হয়রানি ও দুর্নীতিমুক্ত সেবা পাওয়া জনগণের সাংবিধানিক অধিকার। অথচ বাস্তবতা হলো, দেশে ঘুষ ছাড়া কোনো সেবা পাওয়া যায় না বললেই চলে। পাসপোর্ট অধিদপ্তরের আঞ্চলিক অফিসসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের লাগামহীন দুর্নীতি সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার খর্ব করছে এবং এর ফলে প্রান্তিক ও পশ্চাৎপদ জনগোষ্ঠী নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা দেখছি, দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক অবদান রাখার পরও প্রবাসী শ্রমিকরা পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে গিয়ে নানাভাবে দুর্ভোগ ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অথচ পাসপোর্ট অফিসের দুর্নীতিবাজদের কারণে একশ্রেণির মানুষ ঘুষ দিয়ে অবৈধভাবে সেবা নিচ্ছেন। এ অবস্থা চলতে পারে না। সাধারণ মানুষ যাতে হয়রানি, ভোগান্তি ও দুর্নীতিমুক্তভাবে পাসপোর্ট পেতে পারে, সে জন্য প্রতিটি পাসপোর্ট অফিসে অভিযান পরিচালনা এবং নিয়মিত তদারকি প্রয়োজন। প্রবাসী শ্রমিকসহ দেশের সাধারণ মানুষ যাতে প্রয়োজনের সময় কোনোরকম হয়রানি ও ভোগান্তি ছাড়া পাসপোর্ট পেতে পারে, সেজন্য সরকার পাসপোর্ট অধিদপ্তরসহ এর সব আঞ্চলিক অফিস দুর্নীতিমুক্ত করার পদক্ষেপ নেবে, এটাই কাম্য।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button