সম্পাদকীয়

ওষুধের অযৌক্তিক মূল্যবৃদ্ধি নয়

বেড়েছে চিকিৎসা ব্যয়

দেশে চিকিৎসা ব্যয় আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেছে। পাশাপাশি গত দুই বছরে প্রায় সব ধরনের ওষুধের দাম কয়েক দফা বেড়েছে। এরইমধ্যে জানা গেছে, আবারও ওষুধের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা চলছে। ওষুধ শিল্প মালিক সমিতির নেতারা এ ব্যাপারে বৈঠকও করছেন। তাঁদের সিদ্ধান্ত হলেই বেড়ে যাবে ওষুধের দাম। বাংলাদেশে ওষুধ শিল্প সমিতির তথ্য মতে, বর্তমানে দেশে ২১৩টি কম্পানি ওষুধ উৎপাদন ও বিপণন করছে। কোম্পানিগুলো দেড় হাজার রাসায়নিক ধরনের বা জেনেরিক নামের ওষুধ তৈরি করে, যেগুলো প্রায় ৩১ হাজার ব্র্যান্ড নামে বিপণন করা হয়। প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার আওতায় তালিকাভুক্ত ১১৭টি জেনেরিক নামের ওষুধের দাম ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর নির্ধারণ করে। বাকি ওষুধগুলোর দাম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোই নির্ধারণ করে। এ ক্ষেত্রে ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে নূন্যতম যৌক্তিক অবস্থানে রাখার চেষ্টাও খুব একটা দৃশ্যমান নয়। আর শুধু কম্পানিগুলোই যে দাম বাড়াচ্ছে, তা নয়। কোম্পানিগুলোর প্রস্তাবে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার তালিকায় থাকা ওষুধগুলোর দামও বাড়াচ্ছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। ২০২২ সালের ২০ জুলাইয়ে প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে ২০টি জেনেরিকের ৫৩টি ব্র্যান্ডের ওষুধের দাম বাড়ানো হয়। এর পাঁচ মাসের মধ্যে ৪ ডিসেম্বর দ্বিতীয়বার প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ২৪টি ওষুধের দাম বাড়ায় অধিদপ্তর। গত দুই বছরে অত্যাবশ্যকীয় ৯০ শতাংশের বেশি ওষুধের দাম কয়েক দফা বেড়েছে। এর ফল হয়েছে, আশপাশের দেশগুলোর তুলনায় একই ওষুধের দাম বাংলাদেশে অনেক বেশি হয়ে গেছে। এমনকি দেশেরও অনেক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একই ওষুধের দামের অনেক তারতম্য দেখা যায়। যেটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। দেশে ব্যক্তির চিকিৎসা খরচ ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের তথ্য মতে, ব্যক্তির চিকিৎসা খরচের ৬৪.৬ শতাংশই যায় ওষুধের পেছনে। উচ্চ ব্যয়ের কারণে বহু মানুষ চিকিৎসা নিতে পারছে না। বিবিএসের সর্বশেষ খানা আয় ও ব্যয় জরিপে প্রাপ্ত তথ্যে বলা হয়েছে, দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ গ্যাস্ট্রিক, রক্তচাপ, বাতজ¦র, হাঁপানি ও ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভুগলেও তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশের বেশি কোনো ধরনের চিকিৎসাই নেয় না। কারণ ওষুধের অতিরিক্ত দাম। আমরা মনে করি, ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি একটি যৌক্তিক প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে এবং তা সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে রাখতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button