সম্পাদকীয়

বিতর্কিত শিক্ষাক্রম, হুমকির মুখে শিক্ষা ব্যবস্থা?

একটা দেশের ভবিষ্যৎ চাহিদা, সমস্যা, সংকট ও সম্ভাবনা মাথায় রেখে গড়ে তোলা হয় সে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। একজন নাগরিককে তার ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও পেশাগত জীবনের দায়িত্ব পালনে সক্ষম করে তোলাই এ ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য। শিক্ষা যত মানসম্মত হবে, আমাদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন হবে তত বেশি। মানসম্মত শিক্ষার মাধ্যমেই একজন মানুষ উন্নয়নের যথার্থ কারিগর হয়ে দাঁড়ায়। বর্তমানে দেশে চলছে নতুন শিক্ষাক্রম। এ নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীরা শিখছে। শিখছে ভিন্নভাবে। আগের শ্রেণীকক্ষের চার দেওয়ালটাই ছিল তাদের শিক্ষা আহরণের একমাত্র ক্ষেত্র। এখন পুরো পৃথিবীটারই তাদের শেখার জায়গা। নতুন শিক্ষাক্রমে তারা শিখছে শ্রেণীকক্ষে, শিক্ষকদের কাছ থেকে; শিখছে পরিবারে অভিভাবকদের কাজ দেখে। শিখছে পাশের বিভিন্ন পেশাজীবীর জীবন অভিজ্ঞতা থেকে, তাদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমে। কিন্তু ২০২৩ নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যসূচি কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের হাতে আসার পর থেকেই ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়েছে। ২০২৩ এর নতুন পাঠ্যসূচিতে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ব্যাপক বিতর্কিত তত্ত্ব স্থান পেয়েছে। দেশের বিভিন্ন শ্রেণীর ও বিভিন্ন পেশার মানুষ বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ করছেন। তাদের রাগ-ক্ষোভ-দুঃখ ও হতাশা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ঝড় তুলেছে। নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে প্রণীত সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ‘মানুষে মানুষে সাদৃশ্য ও ভিন্নতা’ শীর্ষক জনগোষ্ঠী সম্পর্কে আলোচনা, বইয়ের এ অধ্যায়ে ‘শরীফার গল্প’ অংশটি নিয়েই চলছে এই বিতর্ক। বইয়ের এই অধ্যায়টিতে দেখা যাচ্ছে ট্রান্সজেন্ডার ও সমকামিতার মতো চরম ঘৃণিত ও বিকৃত কাজকে সহজীকরণ করার প্রচেষ্টা চলছে। গত ১৯ জানুয়ারি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের খ-কালীন এক শিক্ষক ওই বইয়ের ‘মানুষে মানুষে সাদৃশ্য ও ভিন্নতা’ অধ্যায়ে ‘শরীফার গল্প’ অংশের পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ফেলে প্রতিবাদ করে। এমন কাজ থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে অনেকেই একই কাজ করা শুরু করেছে। এতে করে হুমকির মুখে পড়েছে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা। তাই এখনি সবাইকে সচেতন হতে হবে। যে কোনো দেশের শিক্ষাক্রমের পাঠ্যসূচি ওই দেশের জাতীয় চেতনা, ধর্মীয় মূল্যবোধ, দেশপ্রেম, দীর্ঘদিনের লালিত ঐতিহ্যকে ধারণ করে। বিশেষ করে, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠ্যসূচিতে তা সযতেœ রাখা হয়, যাতে তারা দেশের আগামী দিনের সম্পদে পরিণত হয়। এ শিক্ষাক্রমের মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভবিষ্যতের জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতাগুলোকে তৈরি করা। তাই এটি মাথায় রেখে তাই সরকারকে নিতে হবে কার্যকরী পদক্ষেপ, আলোচিত শরীফার গল্প নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে হবে এবং কোনো বিভ্রান্তি থাকলে তা অচিরেই পরিবর্তন আনতে হবে। তা না হলে অচিরেই হুমকির মুখে পড়বে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button