সম্পাদকীয়

পাবনা মানসিক হাসপাতালের বেহাল দশা

বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন প্রতিষ্ঠান হচ্ছে পাবনার মানসিক হাসপাতাল। দেশের বিভিন্ন এলাকায় কিছু সরকারি হাসপাতালে মানসিক রোগী ভর্তির সীমিত সুবিধা থাকলেও রোগীর আত্মীয়স্বজন সাধারণত এই হাসপাতাল বেছে নেন। দেশের অধিকাংশ মানুষ মনে করেন, গুরুতর মানসিক রোগের চিকিৎসা বাংলাদেশে শুধু পাবনাতেই হয়ে থাকে। আবার দেশের প্রথম ও সবচেয়ে পরিচিত হাসপাতাল হওয়ার কারণে মানুষ এখানে বেশি এসে থাকেন। বিশেষায়িত হাসপাতাল হলেও এখানে রোগীদের জন্য নেই বিশেষায়িত চিকিৎসা সুবিধা। মানসিক রোগীদের জন্য ওষুধের পাশাপাশি প্রয়োজন সাইকো থেরাপি, অকুপেশনাল থেরাপির মতো আরও নানা কিছু। তবে দক্ষ লোকবলের অভাবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মিলছে না সেসব সুবিধা। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও এখনও আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি এই হাসপাতালে। পুরাতন অবকাঠামোতেই চলছে স্বাস্থ্যসেবার কার্যক্রম। ভবনগুলোর বেশিরভাগেরই জীর্ণ দশা। অনেকগুলোই এখন পরিত্যক্ত। কিছুকিছু ভবন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ডিজিটালের যুগে এই মানসিক হাসপাতালটি এখনও এনালগ যুগেই পড়ে আছে। নেই অনলাইনে সিরিয়াল নেওয়ার ব্যবস্থা। ফলে প্রয়োজনে বাইরে থেকে লোক ভাড়া করে এনে কম্পিউটারে কাজ করানো হয়। এর পরেও এখানে জনবল সংকট নিরসনের কোনো উদ্যোগ নেই। প্রতিদিন এ হাসপাতালে অনেক রোগী আসেন, যাদের নিয়মিত কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে সারিয়ে তোলা সম্ভব। কিন্তু ঠিকমতো কাউন্সেলিং হয় না। এ ব্যাপারে কারও মনোযোগ নেই বললেই চলে। খাবারের মান নিয়ে আছে বিস্তর অভিযোগ। গত বছর টেন্ডার জটিলতায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল খাবার সরবরাহ। পরে সেই সংকট কাটিয়ে উঠলেও মান বাড়েনি খাবারের। প্রতিদিন চার বেলা খাবারের জন্য জনপ্রতি বরাদ্দ মাত্র ১৭৫ টাকা। রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, বাইরের খাবার দিতে না পারায় এখানকার নিম্নমানের খাবার গ্রহণে বাধ্য হয় রোগীরা। চিকিৎসা, ওষুধ ও দালালসহ নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয় সারা দেশ থেকে আসা এই মানসিক হাসপাতালের রোগী ও তাদের স্বজনদের। রয়েছে নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট-সংকট। অভিজ্ঞ চিকিৎসকের অভাবও প্রকট। ফলে রোগীদের প্রত্যাশামতো চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে না। এছাড়াও হাসপাতালের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলেকে ইতোমধ্যে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় হাসপাতালে বরাদ্দও অনেক কম। সব মিলিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় মানসিক হাসপাতাল থেকে প্রত্যাশিত সেবা পাঁচ্ছেন না মানুষ। তাই হাসপাতালের পরিবেশ ও সেবার মানে উন্নত করতে হবে। বিশেষ করে সর্ব প্রথম বাজেট বরাদ্দ ও জনবল বাড়াতে হবে। আশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেবে। এতে করে মানসিক রোগী ও তাঁদের স্বজনদের ভোগান্তি কিছুটা হলেও কমবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button