সম্পাদকীয়

পাঠাভ্যাস বাড়াতে বাস, রেলস্টেশন ও বিনোদন পার্কে গ্রন্থাগার

দেশে প্রচুর শিক্ষা প্রতিষ্ঠিত গড়ে উঠলেও তরুণদের মধ্যে পাঠাভ্যাস কমে যাচ্ছে বলে জরিপে দেখা যাচ্ছে। একটি জরিপের তথ্য মতে, ২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে তরুণদের পাঠ্যসূচির বাইরে বই পড়ার হার প্রায় সাড়ে ছ’ শতাংশ কমে ছিল। অন্যদিকে গত ৩১ ডিসেম্বর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়, মানুষকে বই পড়ায় আগ্রহী করতে রেলস্টেশন, বাস স্টেশন ও বিনোদন পার্কে মিনি লাইব্রেরি বা ছোট গ্রন্থাগার স্থাপন করা হবে। পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তাদের আবাসিক এলাকা, বৃদ্ধাশ্রম ও বহুতল আবাসিক ভবনে গ্রন্থাগার স্থাপন করা হবে। জাতীয় গ্রন্থ-কেন্দ্র ও গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর শুধু বই সরবরাহ করবে। কিন্তু পাঠকক্ষের জন্য ছোট স্থাপনা ও বই রাখার র‌্যাক সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিভাগকে দিতে হবে। কারণ এত স্থাপনা করার মতো অর্থ সংস্কৃতির মন্ত্রণালয়ের নেই। রেল স্টেশন, বাস স্টেশন, বিনোদন পার্ক যেসব মন্ত্রণালয়ের অধীন, সংস্কৃতির মন্ত্রণালয় তাদের সাথে সভা করবে। তবে সংশ্লিষ্টরা তাদের জায়গায় গ্রন্থাগার করতে দিবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তারপরও তরুণদের মধ্যে পাঠাভ্যাস গড়ে তুলতে ঢাকা সহ বিভিন্ন জেলার বিনোদন কেন্দ্রে পাঠকক্ষ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার রমনা পার্ক একটি। গ্রন্থাগার করার আগে পার্কে কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সাথে বৈঠক করবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। যাতে পার্কের ভেতর ছোট আকারে একটি লাইব্রেরি স্থাপনা করে দেওয়া হয়। সাথে সেখানে বই রাখার র‌্যাক করে দেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে রেলপথ ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাথেও বৈঠকে বসতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। কমলাপুর রেল স্টেশনে ছোট গ্রন্থাগার করার পরিকল্পনা রয়েছে। তাছাড়া ট্রেনের ভেতরে যাত্রীদের বই দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এজন্য একজনকে নিয়োগ দেওয়া হবে। তার মাধ্যমে যাত্রার শুরুতে বই দিয়ে শেষে যাত্রীদের কাছ থেকে আবার বই ফেরত দেওয়া হবে। জাতীয় গ্রন্থাগার বই সরবরাহ করবে। জাতীয় গ্রন্থ-কেন্দ্র গত বছর থেকে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বই দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত সারা দেশে ১১০ টি প্রতিষ্ঠানে বই দিয়েছে। এসব যায়গায় সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা দামের বই আর সর্বনিম্ন ১৫ হাজার টাকা দামের বই অনুদান হিসাবে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া উত্তরাঞ্চলে ১৩০ টি সেলুনে প্রতিটিতে ২৫ টি করে বই দেওয়া হয়েছে। অবস্থা দৃষ্টি মনে হচ্ছে, পাঠাভ্যাস গড়ার এক নতুন জাগরণ তৈরির চেষ্টা করছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। এমন উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে বই চুরি রোধ ও সংরক্ষণের জন্য যথাযথ পরিকল্পনা প্রয়োজন। সাথে শুধু প্রভাবশালীদের লেখা বই দিয়ে প্রন্থাগার না ভরে ভালো লেখকদের ভালো বই সরবরাহ করতে হবে। যাতে সংশ্লিষ্টরা আগ্রহী হয়ে বই পড়তে গ্রন্থাগারে যান। তবে উদ্যোগটি একটি বিশেষ প্রকল্পের মাধ্যমে নিয়ে সব ধরনের দুর্নীতি থেকে দুরে রাখতে হবে। এজন্য স্থানীয় জনপ্রতিধিদের অন্তর্ভুক্ত করে একজন পেশাদার ব্যক্তিকে গ্রন্থাগারের বইয়ের হিসাব বিতরণ ও সংরক্ষণ করতে হবে। তা না হলে এত ভালো একটি উদ্যোগও নষ্ট হতে পারে। পাশ করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বইয়ের যেমন প্রয়োজন তেমনি মেধা বিকাশের জন্য অন্যান্য বই পড়াও জরুরি। আর যদি তা পথ চলতে বা অবসরে গ্রন্থাগার থেকে পাওয়া যায়, তবে তা সাধুবাদ জানতে হয়। আমরা এ উদ্যোগের সাফল্য কামনা করছি।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button