সম্পাদকীয়

আম চাষিদের উৎসাহিত করতে হবে

মধু মাসের প্রধান আকর্ষণ ফলের রাজা আমের পুরনো গাছ কেটে অন্য ফসল উৎপাদনের জন্য জমি তৈরি করা হচ্ছে আমের জন্য বিখ্যাত রাজশাহীর চারঘাট ও বাঘা থানা এলাকায়। এ অঞ্চলের আমের সুখ্যাতি শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু এখন অন্যান্য কৃষি পণ্যের দামের সাথে আম আর যেন পাল্লা দিয়ে পেরে উঠছে না। তাই ঐতিহ্যের কথা ভুলো বাগান মালিকেরা একের পর এক আম বাগান কেটে সেসব জায়গায় অন্য ফসলের আবাদ শুরু করেছেন। কেউ কেউ অবশ্য বাণিজ্যিক সম্ভাবনা বিবেচনায় নতুন জাতের আম গাছ লাগাচ্ছেন, তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আম গাছ কেটে অন্য ফসল চাষ করা হচ্ছে। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে মোট ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। এর মধ্যে-১৩ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে আম বাগানই রয়েছে। চারঘাট ও বাঘা উপজেলায়, যেখানকার আমের সুখ্যাতি দেশজোড়া। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, এখন প্রতিদিন কোথাও না কোথাও আম গাছ কাঁটার ঘটনা ঘটেছে। তা যতোই পুরনো গাছই হোক না কেন; আম চাষিরা বলছেন, আগের মতো গাছ লাগিয়ে রাখলেই আর আম হচ্ছে না। ব্যাপক পরিচর্যা করতে হয়। পরিচর্যার ব্যয়ও বেড়েছে। সে অনুপাতে আমের দাম বাড়ছে না। কিছুকিছু ক্ষেত্রে দাম আরও কমেছে। তার বিপরীতে অন্য ফসলের দাম বেড়েছে। তাই আম ছাড়া এখন অন্য ফসলের লাভ বেশি। ফলে আম গাছ কেটে কেউ গম চাষ করছেন, কেউ সবজি চাষ করছেন, কেউ বা ইক্ষুর সাথে সরিষা চাষ করছেন। চারঘাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, এ উপজেলায় আমবাগান আছে ৪ হাজার ৮০ হেক্টর। এর মধ্যে ৯৬ হেক্টর কমেছে। চাষিরা গাছ কেটে বাণিজ্যিক সম্ভাবনাময় আম গাছ লাগাচ্ছেন। অন্যদিকে বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলছেন, বাঘায় মোট আম বাগান আছে ৮ হাজার ৫৭০ হেক্টর। এর মধ্যে ১০৯ হেক্টর বাগান কেটে ফেলা হয়েছে। তবে অনেকেই পুরনো জাতের গাছ কেটে নতুন জাতের আমগাছ লাগাচ্ছেন। সব কিছু মেনে নিলেও নতুন গাছ বড় হতে যে সময় লাগবে সে সময় আমের সংকট সৃষ্টি হতে পারে। তাতে মধু মাসে আমের দাম বেড়ে যাবে, অনেকের পক্ষেই তা কেনা সম্ভব হবে না। সব চেয়ে বড় আশঙ্কা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ অঞ্চলের আম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। আমের সংকট সৃষ্টি হলে আম রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাবে। আম বাগান পরিচর্যার কীট নাশকের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবং আমের যথাযথ মূল্য না পাওয়ায় আম চাষিরা আম চাষে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন এবং ফসল চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন। তাই এদিকে সরকারের দ্রুত দৃষ্টি দেওয়া উচিত। কারণ সারা দেশে সব জেলায় আম চাষ হয়। কিন্তু চারঘাট বাঘার আমের স্বাদের সাথে অন্য জেলার আমের স্বাদের বিস্তার ফারাক। সেজন্য এ অঞ্চলের চাষিদের সহযোগিতা করা এখন সময়ের দাবি। সেজন্য তাদের প্রণোদনা দিয়ে এবং কীট নাশকের দাম নিয়ন্ত্রণ করে আম চাষিদের উৎসাহিত করতে হবে। এতে একদিকে আমের স্বাদ অপরিবর্তিত থাকবে, তেমনি বিশ্ব বাজারে আমাদের আমের চাহিদা অপরিবর্তিত থাকবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button