সম্পাদকীয়

নগরবাসীর কথা মাথায় রাখতে হবে

বেড়ে যাচ্ছে পানির দাম

ঢাকা ওয়াসার পানির উৎপাদন খরচ দেশে চারটি পানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। যদিও ঢাকা ওয়াসার উৎপাদিত ৭৫ শতাংশই গভীর নলকূপের পানি। তা সত্ত্বেও মূল্যস্ফীতির এ অসময়ে সেবাধর্মী এ সংস্থাটি আবারও দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে। গত রোববার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করা হয় রাজধানীর পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সেবার দায়িত্বপ্রাপ্ত এ সংস্থা লাভজনক হওয়ার পরও শ্রেণিভেদে ২৪ থেকে ১৪৭ শতাংশ পানির দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। জানা গেছে, রাজধানীর বাসিন্দাদের আর্থিক সামর্থ্য বিশ্লেষণ করে ঢাকা ওয়াসা এরইমধ্যে পানির দাম নির্ধারণ করতে এলাকাভিত্তিক কারিগরি সমীক্ষা করেছে। ২০২২ সালে পরিচালিত ওই সমীক্ষায় উচ্চবিত্ত, উচ্চমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষ-এমন পাঁচটি শ্রেণি করা হয়। এলাকাভিত্তিক দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট এলাকার মৌজা দর, গৃহকর ও মাসিক আয়ও বিবেচনায় রাখা হয়েছে। জমা দেওয়া সেই সমীক্ষা প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড ২০২০-এর নির্দেশনা মোতাবেক যারা দুই হাজার ৫০০ বর্গফুটের বেশি আয়তনের বাসায় থাকেন তারা উচ্চবিত্ত, যারা দুই হাজার ৫০০ বর্গফুটের বাসায় থাকেন তারা উচ্চমধ্যবিত্ত, যারা ১ হাজার থেকে দেড় হাজার বর্গফুটের বাসায় থাকেন তারা মধ্যবিত্ত এবং যারা ১ হাজার বর্গফুটের কম আয়তনের বাসায় থাকেন তাদের নিম্নবিত্ত ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া যারা বস্তিতে বসবাস করেন তাদের রাখা হয়েছে নিম্নআয়ের শ্রেণিতে। সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসাবে ঢাকা ওয়াসার পানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তটি আদৌ যৌক্তিক নয়। আর শেয়ারবাজারে যাওয়ার মতো উচ্চাভিলাষী চিন্তা থেকে কর্তৃপক্ষের সরে আসাটাই হবে সঠিক পদক্ষেপ। কারণ, মানোন্নয়নের আগে এমন সিদ্ধান্ত নিলে নগরবাসীকে এ সংস্থার ব্যর্থতার চরম খেসারত দিতে হবে। গত ১৪ বছরে একাধিকবার পানির দাম বাড়ানো হলেও সেবার মানে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়নি। তাই নাগরিকদের আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনায় পানির দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার আগে নগরবাসীর মনে সংস্থাটির প্রতি যে নেতিবাচক ধারণা জন্মেছে, তার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। সেবামূলক ও পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে জনমনে আস্থা সৃষ্টি করতে হবে। নানা প্রকল্প গ্রহণের নামে অর্থের অপচয় বন্ধ করতে হবে। অভিযোগ আছে, উচ্চ সুদে বৈদেশিক ঋণের টাকায় প্রকল্প করছে ওয়াসা। এসব ঋণের দায় চাপছে জনগণের ঘাড়ে। অন্যদিকে ঋণের টাকায় করা প্রকল্পের সুফল পুরোপুরি পাওয়া যাচ্ছে না। ঢাকা ওয়াসার স্বচ্ছতার প্রশ্নে সরকারের নীতিনির্ধারকদের চুপ থাকতে দেখা যায়; যা কাম্য নয়। পদ্মা পানি শোধনাগারসহ কয়েকটি প্রকল্পে সংস্থাটি কেন ভুল বিনিয়োগ করেছে, কেন সেখান থেকে রাজস্ব আয় হচ্ছে না-সেসবের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। যেসব ক্ষেত্রে অনিয়ম ও ব্যর্থতা রয়েছে, সেগুলো নিরসনে ঢাকা ওয়াসাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। অযৌক্তিকভাবে দাম না বাড়িয়ে বরং ঢাকা ওয়াসাকে পানি উৎপাদনের অহেতুক ব্যয় কমিয়ে নগরবাসীকে স্বস্তি দেওয়ার বিষয়ে ভাবতে হবে। পানি একটি মৌলিক সেবা; ঢাকা ওয়াসাকে সেটা ভুলে গেলে চলবে না। মূল্যবৃদ্ধি নয়, বরং অনিয়ম-দুর্নীতি ও প্রকল্প বাস্তবায়নের ব্যর্থতা অনুসন্ধানের মাধ্যমে ঢাকা ওয়াসাকে লাভজনক এবং নাগরিকবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসাবে গড়ে তুলতে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button