সম্পাদকীয়

ব্যাংক খাতকে রক্ষা করুন

বেড়েছে খেলাপি ঋণ

দেশে এক বছরে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। এর আগে এক বছরের ব্যবধানে তা বেড়েছিল ১৭ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ লাফিয়ে বাড়ছে খেলাপি ঋণের অঙ্ক। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ কোটি টাকায়। ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে যা ছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। অর্থনীতিবিদরা অবশ্য বলছেন, এ অঙ্কটিও সঠিক নয়। প্রকৃত তথ্য আরও ভয়াবহ। কারণ, মামলার কারণে অনেক ঋণকে খেলাপি হিসাবে চিহ্নিত করা যায় না। আবার অবলোপন করা ঋণও খেলাপির হিসাবে নেই। এ দুই ঋণকে বিবেচনায় নিলে প্রকৃত খেলাপি ঋণের অঙ্ক সাড়ে ৪ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। দেশের অর্থনীতির জন্য এ খেলাপি ঋণ যে বড় ধরনের ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে, তা বলাই বাহুল্য। জানা যায়, একশ্রেণির প্রভাবশালী গ্রাহক ঋণ নিলেও টাকা ফেরত দিচ্ছে না, ফলে খেলাপি ঋণের পরিমাণও বাড়ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানা পদক্ষেপ নিলেও কার্যত তেমন ফল মিলছে না। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে। তবে বোঝাই যাচ্ছে, এটা শুধু আশার মধ্যেই ঘুরপাক খাবে। আমরা অনেকদিন ধরেই খেলাপি ঋণ আদায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতি যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছি। সাম্প্রতিক সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশকিছু উদ্যোগের কথা বললেও কাজে আসেনি, কারণ সেসব পদক্ষেপ বাস্তবে প্রতিফলিত হয়নি। নির্বাচনের আগে খেলাপিদের পুনঃতফশিলের যে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, সে কারণে ঋণের পরিমাণ স্বভাবতই বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে খেলাপি ঋণের এই পরিমাণ অবশ্যই উদ্বেগজনক। আমরা মনে করি, ঋণখেলাপিদের জন্য যতদিন না ট্রাইব্যুনাল গঠন করে আলাদাভাবে বিচারের ব্যবস্থা করা যাবে, ততদিন খেলাপি কিংবা কুঋণ কমবে না। কারণ আর্থিক খাত রাজনৈতিক প্রভাব এবং ক্ষমতার বলয়ের ভেতর চলে গেলে কিছুই করা যায় না। বরং ঋণ না দেওয়ার সংস্কৃতিই গড়ে ওঠে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংককে খেলাপি ঋণ আদায়ে কঠোর নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতে হবে। অনেকের মধ্যে ঋণ না দেওয়ার যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, তা বন্ধ করতে হবে। খেলাপি ঋণের পেছনে ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদে থাকা কতিপয় ব্যক্তির যোগসাজশের যে অভিযোগ ছিল, সে পরিপ্রেক্ষিতে সম্প্রতি ব্যাংক পরিচালকদের জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এটি ভালো সিদ্ধান্ত অবশ্যই। তবে তা পেশাদারির সঙ্গে কার্যকর করতে পারলেই খেলাপি ঋণের লাগাম টানা কিছুটা হলেও সম্ভব হবে। সর্বোপরি সরকারকে অনিয়ম ও দুর্নীতিমুক্ত ব্যাংকব্যবস্থা গড়ে তোলার পাশাপাশি খেলাপি রাঘববোয়ালদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হব।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button