সম্পাদকীয়

বাঙালির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠুক তরুণ প্রজন্ম

বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি থেকে অনেক কিছুই হারিয়ে গেছে। অনেক কিছুই বদলে যাচ্ছে। ইংরেজি ও হিন্দির প্রভাবে রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলা ভাষা আজ রুগ্ন। পরিবর্তনের হাওয়া বইছে সর্বত্র। ক্ষতির উৎসব সব পরিবর্তন নেতিবাচক নয়। স্বতঃস্ফূর্ত পরিবর্তন সহনীয়। কিন্তু অন্যের প্রভাবে নিজের অস্তিত্ব নষ্ট করা আত্মহত্যা এবং অস্তিত্বকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থা, মানুষকে রোবট করে দিচ্ছে দিনকে দিন। অথচ এটা ভুলে গেলে চলবে না, বাঙালির গৌরবময় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য কিন্তু ঠুনকো নয়, এটা হাজার হাজার বছরের ইতিহাস। অপরের সংস্কৃতি নিয়ে গৌরব করার মাঝে কোনো সার্থকতা নেই। নিজস্ব সংস্কৃতিকে মনে প্রাণে ধারণ করাই প্রকৃত গৌরব। তাই আপন গৌরবে বেড়ে উঠুক আমাদের তরুণ প্রজন্ম। সেক্ষেত্রে প্রথমে প্রাধান্য দিতে হবে নিজস্ব সংস্কৃতিকে। বর্তমান প্রজন্মের শিশুরা ভুলতে বসেছে শৈশবের মানে। শৈশবের প্রাণবন্ত উচ্ছ্বাস-উলস্নাসে মাতামাতি আগের মতো চোখে পড়ে না। বিশেষ করে নগর ও শহরের যান্ত্রিকতায় শৈশব জীবনে পড়েছে বিরূপ প্রভাব। তারা বোধহয় ভুলেই যাচ্ছে শৈশব মানে দুরন্তপনা। শৈশব মানেই স্মৃতি ও স্বপ্ন জাগানিয়া সৃষ্টি সুখের উলস্নাসে কাটানো সময়। তারা পাচ্ছে না সোনালি রোদের ঝলমলে আলো, রোদেলা দুপুর, বর্ণিল মেঘের ছায়া, রংধনুর অপূর্ব দৃশ্য, নির্মল উতলা বাতাসের দমকা! চার দেয়ালের ভেতরে যেন বন্দিত্বের সব আয়োজন! টেলিভিশন, কম্পিউটার, ইন্টারনেট, ফেসবুক, ভিডিও গেম এবং মোবাইল গেম রীতিমতো ভূতের বোঝা হয়ে চেপেছে শিশুদের মনে। এ সমাজ কেমন যেন অস্থির হয়ে আছে। সবাই ব্যস্ত যে যার মতো। সময় অতি দ্রুত চলে যায়। জীবনের স্বাদ অপূর্ণ রয়ে যায়। হিংসা প্রতিহিংসায় চলছে দিনাতিপাত। আবহমান কালের সংস্কৃতি এখন কেউ ধারণ করে না, বহন করে না যুগ যুগ ধরে চলে আসা কত রীতি। ফলে বাঙালি জাঁতি হিসাবে আমাদের পুরাতন সংস্কৃতিগুলোকে ধরে রাখার পদক্ষেপ নিতে হবে। এর জন্যে প্রথমত নিজ নিজ দায়ীত্ব থেকে সবার এগিয়ে আসতে হবে। কেননা- এই আধুনিক যুগে আধুনিক পণ্যের কাছে, আধুনিক কলা কৌশলের নিকট মার খেয়ে আস্তে আস্তে বিলুপ্তির পথে। যতই দিন যাচ্ছে ততই যেন মানুষের জীবনে এটে সেটে বসছে আধুনিকতার ধারা। তাই এই দুর্বলতাকে পাশকাটিয়ে আমাদের সংস্কৃতিকে আমাদেরই লালন করতে হবে। তা না হলে তখন হয়ত আমাদের নতুন প্রজন্ম এই ঐতিহ্য থেকে একবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। তাই বাঙালির শাশ্বত শক্তি জাগ্রত হোক, বাঙালি বাঙালি হোক, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি মাথা উঁচু করে দাঁড়াক। আপন মহিমায় বিকশিত হোক বাঙালি সংস্কৃতি।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button