সম্পাদকীয়

রোহিঙ্গাদের হাতে দেশের এনআইডি-পাসপোর্ট

বাড়ছে নিরাপত্তা হুমকি

শক্তিশালী একটি প্রতারক চক্র গত তিন মাসে ১৪৩ রোহিঙ্গার হাতে বাংলাদেশী পাসপোর্ট তৈরি করে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, অবৈধভাবে ভুয়া জন্ম সনদ, জাতিয় পরিচয়পত্র বানিয়ে দিয়ে আসছে এই চক্রটি। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের নাগরিক নয়, তারা মিয়ানমারের নাগরিক, এদেশে শরণার্থী, বিদেশি। তারা যদি এদেশের পাসপোর্ট নিয়ে অন্য কোনো দেশে সন্ত্রাসী কর্মকা- অথবা অপরাধে যুক্ত হয়, তাহলে এর দায়ভার বাংলাদেশের ওপর পড়বে। সেক্ষেত্রে দেশের ভাবমূর্তি ও সুনাম ক্ষুণœ হবে ব্যাপকভাবে। সাড়ে চার বছর আগে রোহিঙ্গারা মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ ও উখিয়ায় প্রবেশ করে। বাংলাদেশ মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দেয় এবং ৩৪টি অস্থায়ী ক্যাম্পে তাদের বাসস্থান, আহার, চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা দেয়। শুরুতে নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা ছিল নয় লাখ। এখন বংশবৃদ্ধির পর তাদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ লাখে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের কূটনৈতিক তৎপরতাও অব্যাহত আছে। কিন্তু মিয়ানমার এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি। বাংলাদেশের ভূখ-ে অবস্থানরত মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা এদেশের জন্য অনেক সমস্যা সৃষ্টি করেছে এবং করেই চলেছে। মাদক পাচার ও মাদকের ব্যবসা এবং বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে। তারা এনআইডি কার্ড ও পাসপোর্ট সংগ্রহ করছে অবৈধ উপায়ে। এ কাজে তারা দুর্নীতিপরায়ণ কিছু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহায়তা পাচ্ছে। অবৈধ পাসপোর্ট ব্যবহার করে বেশকিছু রোহিঙ্গা ইতোমধ্যেই অন্য দেশে পাড়ি জমাচ্ছে। বিদেশি রোহিঙ্গারা কেবল বাংলাদেশের এনআইডি কার্ড নয়, পাসপোর্টও সংগ্রহ করেছে। খবরটি খুবই উদ্বেগজনক। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের সবুজ পাসপোর্ট নিয়ে অন্য কোনো দেশে গিয়ে যদি অপকর্ম করে ধরা পড়ে, তাহলে তাদেরকে বাংলাদেশের নাগরিক হিসাবেই গণ্য করা হবে এবং সেদেশের আইন অনুযায়ী শাস্তি পেতে হবে। এমন একটা পরিস্থিতি আমাদের কারও কাম্য নয়। রোহিঙ্গাদের হাতে বাংলাদেশের এনআইডি যাচ্ছে এমন খবর প্রকাশের পরও কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেননি, তদন্তও হয়নি। এ চক্র মাত্র পাঁচশ থেকে এক হাজার টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কাছে ভুয়া এনআইডি সরবরাহ করেছে এবং কয়েক হাজার টাকার বিনিময়েই নাকি রোহিঙ্গারা এই চক্রের কাছ থেকে বাংলাদেশি পাসপোর্টও সংগ্রহ করেছে। জানা যায় ইসি ও পাসপোর্ট বিভাগের কিছুসংখ্যক অসাধু কর্মচারী এ ধরনের অপকর্মে জড়িত। তাই এ ধরনের সব চক্রকে অবিলম্বে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। তা না হলে বাংলাদেশকে বড় ধরনের হুমকি ও বিপদের মধ্যে পড়তে হতে পারে।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button