সম্পাদকীয়

বিমা খাতে মানুষের আস্থা ফেরাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন

বিমা খাতের বাংলাদেশের ইতিহাস অর্ধশত বছরেরও বেশি। কিন্তু সেভাবে এগোয়নি বিমা খাত। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালে দেশে বিমা কার্যক্রম শুরু হয়। বতর্মানে দেশে ৮১ বিমা কোম্পানি রয়েছে। আর সকাররি হিসেবে ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষ বিমার অন্তর্ভূক্ত। বিমা খাত নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্ত রয়েছে। বিমা কোম্পানিগুলোর প্রতি মানুষ আস্থার সংকটে ভূগছেন। এর মূল কারণ হল বিমার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও টাকা ফেরত পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। বিমার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর টাকা তুলতে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা মাসের পর মাস বছরের পর বছর বিমা অফিসগুলোতে গিয়েও সমাধান পাচ্ছেন না। দেশের বিমা খাত নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের তথ্যঅনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত গত চার বছরে গ্রাহকদের ৩ হাজার ৫০ কোটি টাকার বিমা দাবি অমীমাংসিত রয়েছে। বিমা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখনও অনেক বিমা দাবি মেয়াদ শেষে নিস্পত্তি হচ্ছে না, অর্থাৎ গ্রাহকরা টাকা বুঝে পাচ্ছেন না। বর্তমানে জীবন বিমার ক্ষেত্রের এর নিষ্পত্তির হার ৬৭ শতাংশ আর সাধারণ বিমার ক্ষেত্রে ৩৫ শতাংশ। উন্নত বিশ্বে ব্যক্তির হঠাৎ মৃত্যু কিংবা দুর্ঘটনাজনিত আর্থিক ক্ষতি কমাতে জীবন বিমা প্রচলিত একটা মাধ্যম। বিশেষ করে স্বাস্থ্যখাতে ব্যক্তির ব্যয়ের বোঝা কমাতে স্বাস্থ্যবিমা অনেক দেশেই ব্যাপক প্রচলিত। কিন্তু বাংলাদেশে দীর্ঘদিন চেষ্টার পরও বিমা খাত সেভাবে দাঁড়াতে পারেনি। যার মূল কারণ মেয়াদ শেষে বিমার টাকা যথাসময়ে ফেরত না পাওয়া কিংবা প্রতারণার শিকার হওয়া। বিমা খাতের উপর সাম্প্রতিক এক এক গবেষণায় উঠে এসেছে বিমাখাত নিয়ে সাধারণ মানুষের আস্থাহীনতার কথা। দেশে বিমা খাত নিয়ে চলতি ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে একটি গবেষণা প্রকাশ করে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স বিভাগ। তাদের গবেষণাতেও বাংলাদেশে বিমা খাতের বিস্তার না হওয়ার পেছনে মূল কারণ হিসেবে উঠে এসেছে আস্থাহীনতার কথা। আর এই আস্থাহীনতার মূল কারণ পাওনা দাবি নিষ্পত্তিতে জটিলতা। গবেষণায় উঠে এসেছে, মানুষ ইন্সুরেন্স কন্টিনিউ করছে, কিন্তু যখনই তাদের প্রয়োজনটা দেখা দিচ্ছে অর্থাৎ কোন দুর্ঘটনা ঘটছে, তখন তারা কোম্পানির কাছে যাচ্ছে। কিন্তু টাকাটা তারা পাচ্ছেনা। এখান থেকে ওখানে ঘুরাচ্ছে। তাহলে যে ঝুঁকিটা মেটানোর জন্য একজন গ্রাহক বিমা করল, গ্রাহকের সে উদ্দেশ্য পূরণ হলো না। এছাড়া বিমা করলে কী উপকার হবে, বিমা পলিসি কখন, কী কারণে বাতিল হবে, এটা যে সাধারণ ব্যাংকে টাকা জমানোর মতো সিস্টেম না -সেসব বিষয়ে কোম্পানির অ্যাজেন্টরা অনেক ক্ষেত্রেই পূর্ণাঙ্গ তথ্য দেন না গ্রাহকদের। বিমার পলিসিগুলো সাজানো-গোছানো। কিন্তু যেভাবে এটা বর্ণনা করা হয়, সেটা বোঝাটা সাধারণ মানুষের জন্য কঠিন। অ্যাজেন্টরাও এ ক্ষেত্রে সব তথ্য দেয় না। তাই মানুষের মাঝে আস্থা ফেরাতে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ও কোম্পানিগুলোর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button