দায়ীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দিতে হবে

পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি
মালিক-শ্রমিক সংগঠন, পুলিশ, স্থানীয় মাস্তান ও কতিপয় অসৎ রাজনৈতিক নেতার কারণে দেশে পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি বেপরোয়া রূপ নিয়েছে। যাত্রী কিংবা পণ্য পরিবহন-সব ক্ষেত্রেই চাঁদা ছাড়া গাড়ির চাকা ঘোরে না। দেশজুড়ে এ খাতে নানা কৌশলে চাঁদাবাজি চলছে। গণপরিবহনে যেমন রুট মালিক ও মালিক-শ্রমিক সমিতির নামে সরাসরি চাঁদাবাজি চলে, তেমনি আন্তঃজেলা ট্রাকের ক্ষেত্রে মাসোহারা হিসাবে টোকেন দিয়ে নীরব চাঁদাবাজি করে ট্রাফিক পুলিশ। আর ঢাকায় ঢোকার মুখে চাঁদা তুলতে সরব স্থানীয় মাস্তানদের লাঠিয়াল বাহিনী। পণ্যবাহী ট্রাকচালকরা চাঁদা না দিলে তারা হামলে পড়ে। রাজধানীতে আবার যাত্রীবাহী পরিবহন ও ট্রাকের চাঁদাবাজির ধরন আলাদা। বাসগুলোর ক্ষেত্রে মূলত কেন্দ্রীয়ভাবে মালিক সমিতিগুলো এটি নিয়ন্ত্রণ করে। পণ্যবাহী ট্রাকে এমন কেন্দ্রীয় কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ঢাকার বাইরে ট্রাকে পণ্য ওঠানো থেকে শুরু হয় চাঁদাবাজি। এভাবে সারা দেশ থেকে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার চাঁদা তোলা হয়। চাঁদার এ টাকা বিভিন্ন স্তরে তারা ভাগবাঁটোয়ারা করে নেয়। জানা যায়, রাজধানীর কাওরান বাজার, বাবুবাজার, গুলিস্তান, দৈনিক বাংলা মোড়, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, ইত্তেফাক মোড়, টিটিপাড়া, কাজলা, গাবতলী, ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টারসহ বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য বেশি। রাত যত গভীর হয়, তাদের তৎপরতা ততই বাড়তে থাকে। অভিযোগ আছে, চাঁদাবাজদের সিগন্যাল উপেক্ষা করে গাড়ি চালালে নানা রকম ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। চাঁদাবাজরা গাড়ি ভাঙচুর, এমনকি চালক ও সহযোগীকে মারধর পর্যন্ত করে। এ কারণে চাঁদাবাজদের এক ইশারাতেই এখন থেমে যায় গাড়ি। চাঁদা তোলার জন্য রীতিমতো বেতনভুক্ত লাঠিয়াল বাহিনীও রাখা হচ্ছে। তারা রোস্টার করে ডিউটি বণ্টন করে চাঁদা তোলে। এ টাকার বড় একটি অংশ যায় পুলিশ ও স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালী ব্যক্তিদের হাতে। মাঝেমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে চুনোপুঁটিরা ধরা পড়লেও গডফাদাররা থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। এমন অবস্থায় এ খাতে সরকার অবিলম্বে দৃষ্টি না দিলে সংকট আরও বাড়বে। ভুলে গেলে চলবে না, চাঁদার কারণে পরিবহন মালিক-শ্রমিক তো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেনই, খরচ সমন্বয় করতে গিয়ে নিত্যপণ্যের দামও বাড়ছে। এর প্রভাব পড়ছে সাধারণ মানুষের ওপর। চাঁদাবাজদের হাতে জিম্মি হওয়া সাধারণ মানুষদের উদ্ধারে তাই সরকারকে কঠোর হতে হবে। গণপরিবহনে সুষ্ঠু যাত্রীসেবা যেমন নিশ্চিত করতে হবে, তেমনি পণ্য পরিবহনের কাজে নিয়োজিত ট্রাক-কাভার্ডভ্যানসহ সব ধরনের যানে অবৈধ চাঁদাবাজি রুখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোয় থাকা চাঁদাবাজদের সহযোগী অসাধু কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে তাদেরও শাস্তির আওতায় আনতে হবে।