সম্পাদকীয়

সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের অধিকার সুনিশ্চিত হোক

১৯৯৭ সাল থেকে আমাদের দেশে শিশুদের গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিতে এবং তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে প্রতি বছর ১৭ মার্চ জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়। আর প্রতি বছরের মতো এবারো শিশুদের নিয়ে বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে পালিত হলো জাতীয় শিশু দিবস। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি। দিনটিতে সাধারণ ছুটির পাশাপাশি এর তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতারসহ বেসরকারি বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল প্রচার করবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। সংবাদপত্রগুলোয় প্রকাশ হয়েছে বিশেষ ক্রোড়পত্র ও নিবন্ধ। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আয়োজন করেছে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার। কারন আমাদের আজকের শিশুই বড় হয়ে ভবিষ্যতে দেশ ও জাতির দায়িত্ব গ্রহণ করবে। সমাজ ব্যবস্থাকে উন্নত করে তুলবে। প্রত্যেকটি শিশুই একটি সাদা কাগজের মতো। তারা যে পরিবেশে বেড়ে ওঠে সে পরিবেশের আচার-আচরণ অনুকরণ করে এবং সেভাবেই অভ্যস্ত হয়ে পরে। অনুকূল পরিবেশ, উপযুক্ত শিক্ষা এবং উপযুক্ত অভিভাবক পেলে যেমন একটি শিশু পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে বেড়ে ওঠে, ঠিক তেমনই বৈরী ও কুরুচিপূর্ণ পরিবেশ, উপযুক্ত শিক্ষার অভাব, অসৎসঙ্গ এবং বিবেকহীন অভিভাবকের অধীনে শিশু বড় হয়ে অমানুষ ও লম্পট চরিত্রের হতে পারে, যা ভবিষ্যতে সেই জাতির জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। শিশুরা অবহেলিত থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম মুখ থুবড়ে পড়বে। তাই শিশু দিবস পালনের উদ্দেশ্য হচ্ছে শিশুদের কল্যাণ সাধন এবং তাদের মৌলিক অধিকার আদায়সহ নানাবিধ সমস্যার সমাধান। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় ৫ কোটি শিশু-কিশোর রয়েছে। তবে দুঃখের বিষয়, এখনো তাদের অনেকেরই মৌলিক অধিকারগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। আজও কত শিশু ক্ষুধার যন্ত্রণায় ভোগে। পরিধান করার মতো বস্ত্র পায় না। রোগশোকে চিকিৎসা পায় না, এমনকি সেবন করার মতো ওষুধ। দারিদ্র্যের কারণে বিপুল সংখ্যক শিশুকে জীবিকার তাগিদে শ্রমদাসে পরিণত হতে হচ্ছে। এখনো অনেক শিশুকে অন্যের গৃহে, হোটেল-রেস্টুরেন্টে, কলকারখানায় কাজ করতে হচ্ছে। যে সময়ে শিশুটির শিক্ষাঙ্গনে বিচরণ করার কথা ছিল, সেই সময়ে তার বিচরণ ঘটছে শ্রমক্ষেত্রে। পরিপূর্ণভাবে প্রস্ফুটিত হওয়ার আগেই পথে-প্রান্তরে কত শিশু নিঃশব্দে অকালে ঝরে যায়, তার কোনো হিসাব নেই। তাই প্রতি বছর শুধু শিশু দিবস পালন করলেই আমাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। প্রকৃতপক্ষে শিশুর অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণসহ শিশুর উন্নয়ন ও বিকাশের জন্য তৈরি করা শিশু সংগঠনগুলোকে আরো দৃঢ়ভাবে কাজ করতে হবে। জাতীয় প্রচারণা ও বিভিন্ন আঙ্গিকের অনুষ্ঠানমালা প্রচার করতে হবে। আমাদের আশপাশে অবহেলিত প্রতিটি শিশুর দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। শিশুর সঠিক বিকাশে সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরাপদ পরিবেশের ব্যবস্থা করতে হবে, তবেই দেশ ও জাতির সার্বিক উন্নয়ন সাধিত হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button