সম্পাদকীয়

অপরিকল্পিত ভূমি ব্যবহারে কমছে কৃষি জমি

আমাদের বাংলাদেশের কৃষি ও কৃষকের অবস্থা দিন দিন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। দেশের বিপুল পরিমাণ জমি চলে যাচ্ছে অকৃষি খাতে। এভাবে চললে একদিন হয়তো চাষাবাদের জন্য জমি ফুরিয়ে যাবে- এমন আশঙ্কা অমূলক নয়। পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ এখনও কৃষিনির্ভর। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনও নির্ধারিত হয়ে থাকে কৃষির উৎপাদনের হ্রাস-বৃদ্ধির ওপর। কিন্তু দিন দিন দেশের কৃষিজমি চলে যাচ্ছে অকৃষি খাতে। নতুন বসতভিটা, রাস্তাঘাট-অবকাঠামো নির্মাণ, ইটভাটা, কলকারখানা, নগরায়ণে অধিগ্রহণেই ভূমির অবক্ষয় হচ্ছে বেশি। বর্তমান হারে ভূমি অবক্ষয় চলতে থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে কোনো কৃষিজমি থাকবে না। ফলে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা আর অস্থিরতার মধ্যেও দেশকে অনেকটা স্বাভাবিক রাখছে কষি। সংগত কারণেই কৃষিজমির সুরক্ষা জরুরি। তাই জমির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে জাতীয় ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা ও নীতিমালা জরুরি। কৃষিজমি অকৃষি কাজে ব্যবহারের প্রবণতা কঠোরভাবে রুখতে হবে। কৃষিনির্ভর বাংলাদেশে কৃষিজমির সুরক্ষা ব্যর্থ হলে টিকে থাকা কঠিন হবে। দেশে কৃষিজমির পরিমাণ কমছেই। স্বাধীনতার পর থেকে কৃষিজমির পরিমাণ অর্ধেকে নেমে এসেছে। এ সময়ে জনসংখ্যা বেড়েছে আড়াই গুণেরও বেশি। ৫৩ বছর আগেও বাংলাদেশ ছিল বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতির দেশগুলোর একটি। জনসংখ্যা আড়াই গুণ বেড়ে যাওয়ায় বর্ধিত জনসংখ্যার প্রয়োজনে ঘরবাড়ি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ব্যাপকহারে কৃষিজমি। রাস্তাঘাট, বাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত তৈরিতেও কৃষিজমির ব্যবহার এড়ানো যাচ্ছে না। শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জন্যও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে কৃষিজমি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর কৃষিশুমারিতেও নিশ্চিত করা হয়েছে কৃষিজমি কমার তথ্য। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ‘কৃষিশুমারি-২০১৯’ জরিপ প্রকাশ করে বিবিএস। জরিপ অনুযায়ী, ১১ বছরে আবাদি জমির পরিমাণ কমেছে ৪ লাখ ১৬ হাজার একর। ২০০৮ সালে আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৯০ লাখ ৯৭ হাজার একর। ২০১৯ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৮৬ লাখ ৮১ হাজার একরে। মৃত্তিকাসম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের ‘বাংলাদেশের কৃষিজমি বিলুপ্তির প্রবণতা’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে প্রতি বছর ৬৯ হাজার ৭৬০ হেক্টর আবাদি জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। শুধু অবকাঠামো নির্মাণকাজের কারণে প্রতি বছর ৩ হাজার হেক্টর জমি হারিয়ে যাচ্ছে। জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতি-২০১০ এবং কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি জোনিং আইন-২০১০ অনুসারে কৃষিজমি কৃষি কাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু বিকল্প জমি না থাকায় কৃষিজমি ভরাট করে বাড়িঘর, শিল্পকারখানা, ইটভাটা বা অন্য কোনো অকৃষি স্থাপনা হচ্ছে। বেঁচে থাকার জন্য বিশেষত খাদ্য উৎপাদনে কৃষিজমি সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। পাশাপাশি বাড়িঘর, রাস্তা, স্থাপনা কলকারখানা না বানালেও চলবে না। এ সমস্যার মোকাবিলায় গ্রাম থেকে শহর সর্বত্রই পরিকল্পিত আবাসন গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিতে হবে। কম জমিতে বহুতল ভবন গড়ে তুলে ঘরবাড়ি বানানোর জন্য কৃষিজমির যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধ করা দরকার। সাগরপ্রান্ত থেকে জমি উদ্ধারের বিষয়েও ভাবতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও দেখুন
Close
Back to top button