সম্পাদকীয়

দুষ্কৃতকারীদের ছাড় নয়

ওষুধে ভেজাল

ওষুধে ভেজাল মানে মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া। আর এই কাজ যারা করে তারা শুধু অপরাধীই নয়, দুষ্কৃতকারীও। এদেরকে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া যাবে না। প্রকাশিত খবরে জানা যায়, গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল জি-পেথিডিন ইনজেকশন সাত থেকে আট বছর ধরে নকল করে বাজারজাত করে আসছিল একটি চক্র। প্রচলিত জি-ডায়াজিপাম নামের ঘুমের ইনজেকশনকে ঘরোয়াভাবে নকল করে ব্যথানাশক জি-পেথিডিন ইনজেকশন হিসেবে চালানো হতো। সম্প্রতি এই চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পুলিশ জানিয়েছেন, গ্রেপ্তার করা ব্যক্তিরা রাজধানীর মিটফোর্ড এলাকা থেকে জি-ডায়াজিপাম নামের ঘুমের ইনজেকশন প্রতিটি আট টাকায় কিনে বাসায় নিয়ে যান। পরে সেখানে ইনজেকশন অ্যাম্পুলকে এসিড দিয়ে ভিজিয়ে রেখে গায়ের লেখা তুলে বিশেষভাবে তৈরি করা স্ক্রিন প্রিন্ট করার ফ্রেম দিয়ে ‘জি-পেথিডিন’ ইনজেকশনের নামে নামকরণ করা হয়। পরে এসব অ্যাম্পুল প্লাস্টিকের ট্রেতে পাঁচটি করে সাজিয়ে হাতে চালানো চাপ মেশিন দিয়ে জি-পেথিডিনের ব্যথানাশক ফয়েল পেপার সংযুক্ত করা হয়। আর এসব নকল জি-পেথিডিনের প্রতিটি ৬০০ টাকা মূল্যে বাজারজাত করা হয়। রাজধানীর অনেক খ্যাতনামা হাসপাতালের নিচের বিভিন্ন ফার্মেসিতে এসব ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এর আগেও নকল-ভেজাল ওষুধ উদ্ধার ও জব্দ করা হয়েছে। নকল ওষুধের কারখানা আবিষ্কার করা হয়েছে। নকল প্যারাসিটামলসহ অন্যান্য ওষুধ সেবনে শিশুমৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে দেশে। কিন্তু বন্ধ হয়নি নকল ওষুধ তৈরি ও তা বাজারজাত করার প্রবণতা। নকল ও ভেজাল ওষুধের কারবারিরা ধরা পড়ছে, আবিষ্কার হচ্ছে নতুন নতুন ভেজাল ওষুধের কারখানা, কিন্তু ভেজাল ওষুধ তৈরি তো বন্ধ হচ্ছে না। বন্ধ হচ্ছে না এই প্রতারকচক্রের অবৈধ ব্যবসা। অনেক ওষুধ ব্যবসায়ী দাদনের মতো করে ওষুধ প্রস্তুতকারী কম্পানিকে আগাম টাকা দিয়ে ভেজাল ওষুধ তৈরি করেন। এর আগে অনেক ট্যাবলেট, ক্যাপসুল পরীক্ষা করে দেখা গেছে, সেগুলোর ভেতরে সাধারণ আটা-ময়দা ছাড়া কিছুই নেই। সিরাপের মধ্যে আছে শুধু রং। ফলে ওষুধ সেবন করে সুস্থ হওয়ার পরিবর্তে মানুষ আরো বেশি করে অসুস্থ হচ্ছে। বাংলাদেশে নকল ও ভেজাল ওষুধ কী পরিমাণে তৈরি হয়, তার কোনো নির্দিষ্ট তথ্য সম্ভবত নেই। নানা ধরনের সিরাপ, ট্যাবলেট ও ক্যাপসুল নকল হচ্ছে। এর পাশাপাশি আছে নি¤œমানের ওষুধ তৈরির কারবার। সরল বিশ্বাসে ওষুধ কিনে প্রতারিত হন ক্রেতা। বাজারে ভেজাল ও মানহীন ওষুধের ছড়াছড়িÍসংবাদপত্রে এমন খবর প্রায়ই থাকে। যেকোনো মূল্যে নকল ওষুধ তৈরি ও বাজারজাত করা বন্ধ করতে হবে। ভেজাল ওষুধ উৎপাদক ও বাজারজাতকারীদের কঠোর শাস্তির মুখোমুখি করার কোনো বিকল্প নেই।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button