সম্পাদকীয়

১০ মিনিটের বৃষ্টিতে সৃষ্টি জলাবদ্ধতার, এই ভোগান্তির শেষ কোথায়?

রাজধানী ঢাকায় বর্ষা মৌসুমে একটু বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধ হয়ে নাগরিক জীবনে চরম দুর্ভোগ বয়ে আনছে। বৃষ্টি হলে রাজধানী ঢাকার এমন জনদুর্ভোগের চিত্র নতুন নয়। বছরের পর বছর এমন দুর্ভোগের সাক্ষী নগরবাসী। অথচ প্রতি বছরই জলাবদ্ধতা নিরসনে বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেয় সরকার। ঢাকায় জলাবদ্ধতার কারণগুলো একদিনে সৃষ্টি হয়নি। অপরিকল্পিত নগরায়নের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো ঢাকা শহর। বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের খালগুলো দখল করে বাড়ি, মার্কেট, রাস্তা নির্মাণ, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য থাকা নি¤œাঞ্চলগুলো ভরাট করে আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলা, পুকুর, জলাশয়, উন্মুক্ত স্থান ভরাট করে শহরকে কংক্রিটের আবরণে ঢেকে ফেলা, দুর্বল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, আর সেই সঙ্গে ঢাকা শহরের রাস্তায়, ড্রেনে ও খালে যত্রতত্র ময়লা ফেলায় অভ্যস্ত ঢাকাবাসী। এক প্রতিবেদনে জলাবদ্ধতার কারণ হিসেবে দেখা যায়, জলাবদ্ধতা নিরসনে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর আন্তরিকতার অভাব, আইন প্রতিপালন ও বাস্তবায়নের অভাব, জবাবদিহিতার অভাব, উদাসীনতা এবং প্রভাবশালীদের দখল ও ভরাট এবং জনগণের সচেতনতার অভাবে ঢাকার অধিকাংশ খাল হারিয়ে গেছে। টিকে থাকাগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহ নেই। নদীর সাথে সংযোগও প্রায় কাটা পড়ছে। ফলে অল্প বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। একটি পরিকল্পিত আধুনিক নগরীর মোট আয়তনের ২০ থেকে ২৫ ভাগ জায়গায় রাস্তা থাকা জরুরি। সেক্ষেত্রে রাজধানীতে রাস্তা আছে সাত থেকে আট ভাগ। আবার এই আট ভাগের অনেক অংশের রাস্তা খুঁড়ে রাখা হয়েছে, ফলে সেখানে তৈরি হয়েছে খানাখন্দ আর সেখানে বৃষ্টির পানি জমে তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। এই জলাবদ্ধতার কারণে রাজধানীর সড়কগুলোরও ক্ষতিসাধন হয়। নি¤œমানের রাস্তার ওপর অল্প সময় পানি জমে থাকলে সড়ক কাঠামোর নড়বড়ে হয়ে যায়। সড়কের উপরিতলের বিটুমিন, খোয়া, ইট-সুরকি উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয় ছোট-বড় গর্তের। কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে বরাবরই উদাসীন। দুই সিটি কর্পোরেশন ও অন্যান্য সেবা প্রদানকারী সংস্থার উন্নয়ন কাজে কেবল সমন্বয়হীনতা নয়, পরিকল্পনা ও দূরদর্শিতার অভাবের কারণে এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। যেসব সংস্থা পানি নিষ্কাশনের এই কাজে জড়িত, তাদের মধ্যে আছে ঢাকা ওয়াসা, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এগুলোর মধ্যে ঢাকা ওয়াসা রক্ষণাবেক্ষণ করে ৩৮৫ কিলোমিটার বড় আকৃতির নালা, ৮০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের খাল ও চারটি স্থায়ী পাম্পস্টেশন। দুই সিটি কর্পোরেশন দেখভাল করে দুই হাজার ২১১ কিলোমিটার নালা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের আছে ৫২টি স্লুইস গেট ও একটি পাম্পস্টেশন (ডিএনডি এলাকা ছাড়া)। রাজউকের হাতে আছে ৩০০ একরের হাতিরঝিল এবং প্রায় ২৫ কিলোমিটার লেক (পূর্বাচল ছাড়া)। এর সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কর্তৃপক্ষকে এখনি নিতে হবে স্থায়ী পরিকল্পনা। নগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নত এবং তা সার্বক্ষণিকভাবে পরিষ্কার রাখার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। একইসঙ্গে রাজধানীর চারপাশের নদ-নদীগুলো সংস্কার করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। সর্বোপরি একের দায় অন্যের ওপর না চাপিয়ে নাগরিক সেবাদানকারী সংস্থাগুলোর সমন্বিতভাবে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণই হতে পারে জলাবদ্ধতার মতো সমস্যার সমাধানের একমাত্র পথ।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button