সম্পাদকীয়

ঈদে নৌপথ নিরাপদ রাখুন

ঝুঁকিপূর্ণ বাল্কহেড

প্রতিবছর ঈদে ঘরে ফেরা অনেক মানুষের প্রাণ যায় সড়কে। এছাড়া নৌপথে দুর্ঘটনার কারণেও ঈদযাত্রায় অনেক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। দেশের নৌপথের এক আতঙ্কের নাম বাল্কহেড। এসব নৌযানের কারণে একের পর এক দুর্ঘটনায় মানুষের প্রাণহানি ঘটলেও কর্তৃপক্ষের টনক নড়ছে না। সর্বশেষ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মেঘনা নদীতে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে বাল্কহেডের ধাক্কায় ৯ জনের প্রাণহানি ঘটে। সারা দেশে নদীপথে কোনোরকম নিয়ম না মেনেই চলছে এসব নৌযান। সরকারি হিসাবে ৪ হাজার ৭০০টি নিবন্ধিত বাল্কহেডের কথা বলা হলেও সারা দেশে চলছে ১০ হাজারের বেশি বাল্কহেড। এসব নৌযানের ফিটনেসের বালাই নেই। বাল্কহেডের ধাক্কায় প্রায়ই যাত্রীবাহী নৌযান ডুবলেও কর্তৃপক্ষের ঘুম ভাঙছে না। নিবন্ধন না থাকায় কোনো বাল্কহেড দুর্ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে গেলে তা শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। অভিযোগ আছে, নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ডকে ম্যানেজ করে চলাচল করছে হাজার হাজার ফিটনেস ও রেজিস্ট্রেশনবিহীন বাল্কহেড। বাল্কহেড নৌযান মালিক সমিতির সভাপতির অভিযোগ, প্রতিদিন একেকটি বাল্কহেড থেকে ৬০-৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা নেওয়া হয়। বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, নৌপথে যাত্রীবাহী লঞ্চ-স্টিমার ও জাহাজের যাত্রা নিরাপদ করতে রাতে যাত্রীবাহী নৌরুটে বাল্কহেডসহ পণ্যবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ রাখার নির্দেশনা রয়েছে। তবে রাতে বাল্কহেডসহ পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়নি বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা। ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে নৌপথের আইনশৃঙ্খলা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বুধবার মতবিনিময় সভায় নৌপুলিশ প্রধান জানান, এবার ঈদের আগে-পরে ১১ দিন সব ধরনের বাল্কহেড চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে গৃহীত এ পদক্ষেপকে আমরা সাধুবাদ জানাই। প্রশ্ন হলো, কর্তৃপক্ষ কি যাত্রীদের ১১ দিনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই সন্তুষ্ট থাকবে? নৌপথের যাত্রীরা যাতে সারা বছর নিরাপদে যাতায়াত করতে পারেন, কর্তৃপক্ষকে তা নিশ্চিত করতে হবে। অবৈধ বাল্কহেড চলাচল বন্ধে অভিযান চালিয়ে সুকানি ও শ্রমিককে আটক করার খবর গণমাধ্যমে আসে। তবে কিছুদিন পরপর বাল্কহেডের ধাক্কায় ট্রলারডুবির ঘটনায় এসব অভিযানের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। কর্তৃপক্ষের উচিত লোকদেখানো অভিযানের পরিবর্তে দেশের নৌপথ প্রকৃত অর্থেই ঝুঁকিমুক্ত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন রুটে নৌযান চলাচলের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করছে কয়েকটি চক্র। দেশের নৌযোগাযোগ খাতে সার্বিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় পদক্ষেপ নিতে হবে এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যা যা দরকার, সবই করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button