আশঙ্কাজনক হাড়ে বাড়ছে অগ্নি দুর্ঘটনা

বর্তমানে আমাদের দেশে প্রতিনিয়তই বহু ধরনের দুর্ঘটনায় মানুষের প্রাণহানিসহ ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। এরইমধ্যে অগ্নিজনিত দুর্ঘটনা অন্যতম। গত কয়েক বছরে এ দুর্ঘটনায় প্রাণহানিসহ সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পুড়ে ছাই হয়েছে অগণিত মানুষের স্বপ্ন। বর্তমানে অগ্নিকা- নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি সম্প্রতি বেইলি রোডে গ্রিন কোজি কটেজে আগুনে (যা কিনা বেইলি রোড ট্রাজেডি নামে পরিচিতি পায়) ৪৬ জনের মৃত্যু হয় যা পুরো দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিলো। এই ট্রাজেডির পরও রাজধানীতে আরো বেশ কিছু অগ্নি দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছিলো। এ থেকে বোঝা যায় যে ঢাকা কতোটা ঝুঁকিপূর্ণ। এক পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ২০১৮ সালে রাজধানী ঢাকা শহরেই ২,০৮৮টি অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটেছে। ২০০৫ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ১৭ বছরে অগ্নি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৩ হাজার এবং আহত হয়েছে ১২ হাজার ৩৭৪ জন মানুষ। এ ছাড়া পৃথিবীতে অগ্নি দুর্ঘটনায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শহর ঘোষণা করা হয়েছে ঢাকাকে। অন্য এক সমীক্ষায় দেখা যায় গত ১৫ বছর ধরে সারা দেশে দৈনিক ৫২টি আগুনের ঘটনা ঘটছে। ফেব্রুয়ারি-মার্চ অর্থাৎ ফাল্গুনে এ সংখ্যা গড়ের চেয়ে বেশি হয়। গত বছর শুধু মার্চে আগুনের ঘটনা ঘটে তিন হাজার ৩৩৪টি। অগ্নি-দুর্ঘটনা এড়াতে জনসচেতনতা খুবই জরুরি বিষয়। বড় বড় অগ্নিকা-ের ঘটনার ধরন ও তদন্ত প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় বেশির ভাগ অগ্নিকা-ের কারণই বৈদ্যুতিক গোলযোগ। অর্থাৎ নি¤œমানের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহারের কারণে সহজেই শর্টসার্কিট হয়ে আগুনের ঘটনা ঘটছে। এর পাশাপাশি আবাসিক বিল্ডিঙের ভিতরে অনিরাপদ সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহারও অন্যতম কারণ এসব অগ্নি কান্ড সঙ্ঘটিত হওয়ার। যানবাহনে মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার নিয়ে ঘুরে বেড়ানোও খুব সাধারণ একটি ঘটনা। মেয়াদোত্তীর্ণ একটি সিলিন্ডার একটি বোমার মতো মারাত্মক হয়ে থাকে। আগুন ধরে যখন ক্ষয়ক্ষতির পরিবেশ তৈরি হয় তখন ঘিঞ্জি পরিবেশ, দুর্বল ব্যবস্থাপনা, সরু রাস্তা দিয়ে উদ্ধারসামগ্রী পৌঁছাতে কষ্টসাধ্য হয়ে পরে, বিল্ডিং গুলোতে অগ্নিপ্রতিরোধের ব্যবস্থা না থাকায় ও ঢাকার আশপাশে ও মধ্যের নদী-খালের পানিশূন্যতা কারণে উদ্ধারকার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে সংঘটিত অগ্নিকা- থেকে প্রচুর পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়। তাই এখনি আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। প্রথমত আবাসিক ভবনের বাসিন্দা ও কর্মচারী এবং বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের আগুন নির্বাপণে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এতে করে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। পাশাপাশি মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। গৃহ নির্মাণের ক্ষেত্রে রাস্তা বড় রাখার বিষয়ে বিশেষ নজর দিতে হবে। সর্বোপরি অগ্নিজনিত দুর্ঘটনা রোধে আপাতত নিয়মকানুন মেনে চলা এবং সতর্ক থাকার কোন বিকল্প নেই।