বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি

লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত গ্রামীণ জন জীবন
গরম পড়ে গেছে। টানা কয়েক দিন দাবদাহ চলছে দেশজুড়ে। এ সময়টায় লোডশেডিংয়ের যে অবস্থা, তাতে সামনের দিনগুলোয় অবস্থা কী দাঁড়াবে, তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন দেশবাসী। দিন দিন পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে উঠছে। রমজানে একদিকে গরম, অন্যদিকে লোডশেডিং, বলা যায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলো মানুষ। বিশেষ করে ইফতার, সেহরি ও তারাবির সময় লোডশেডিংয়ের কারণে কষ্ট বেড়ে যায় দ্বিগুন হারে। বর্তমানে অনেক গ্রামে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। এ লোডশেডিংয়ের কারণ কী? দেশে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ভালো বলেই তো আমরা জানি। বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো বলছে, রাজধানীকে আলোকিত করতেই গ্রামের বিদ্যুতে কাটছাঁট করা হচ্ছে। তবে কি রাজধানীর অধিবাসীরাই দেশের নাগরিক, গ্রামীণ জনপদের মানুষ দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক? গরমের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদা ও জোগানে বড় ধরনের পার্থক্য লক্ষ করা যাচ্ছে। কিন্তু জ¦ালানি সংকট থাকায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। এ মুহূর্তে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা উৎপাদন সক্ষমতার অর্ধেকেরও কম। দেশীয় উৎস থেকে জ¦ালানি চাহিদা মেটাতে না পারায় এবং জ¦ালানি আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় টাকা ও ডলারের জোগান না থাকায় তেল-গ্যাস-কয়লা আমদানিতে ভাঁটা পড়েছে। এ অবস্থায় বেশকিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকছে, ওদিকে গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে, তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলোও পুরোদমে চালানো হচ্ছে না। বর্তমান অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় কী? বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে অর্থের জোগান বাড়ানো হয়েছে ঠিকই; কিন্তু বিদ্যুৎ বিতরণের এই হাল-হকিকত কেন? এটা তো জানা কথাই যে, গরমকালে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ে। গত দুই বছরেও গরমের সময় লোডশেডিং বেড়েছিল। গরমকালে সম্ভাব্য লোডশেডিংয়ের জন্য প্রস্তুতি থাকতে হয়। ঈদের সময় যেহেতু মন্ত্রী-এমপিসহ ভিআইপিরা নিজ নিজ গ্রামে যান, তাই তাদের বিশেষ এলাকায় বিদ্যুৎ দিতে গিয়ে বাকি বৃহৎ অঞ্চলের মানুষের ভোগান্তি আরও বেড়ে যাওয়ার শঙ্ক দেখা দেয়। বিদ্যুতের ঘাটতি বর্তমান সময়ে কিভাবে মেটানো যায়, হাজার ভেবেও বোধহয় তার উপায় বের করা যাবে না। তবে দেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ কীভাবে নিশ্চিত করা যায়, সেই বিষয়টি মাথায় না রাখলে দেশের মানুষ কিন্তু একসময় বর্তমান সরকারের প্রতি তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে নিতে পারে। সরকারকে গভীরভাবে বিষয়টি ভাবতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, রাজধানীকেন্দ্রিক নয়, সমতাভিত্তিক বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।