সম্পাদকীয়

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরান

মর্মান্তিক দুর্ঘটনা

পরিবারের সঙ্গে ঈদ করে ঢাকায় ফেরার পথে গত মঙ্গলবার বাস-পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে ১৪ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন। একই দিন ময়মনসিংহে দুটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই দুজন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন বেশ কজন। ঈদের ছুটিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়কে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৭৪ জন। এর মধ্যে ৩৫ জন নিহত হয়েছেন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়। ঈদের দিন বিকালে রাজধানীর সদরঘাটে এক লঞ্চের ধাক্কায় অপর লঞ্চের দড়ি ছিঁড়ে একই পরিবারের তিনজনসহ পাঁচ যাত্রী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও বেশ কজন আহত হয়েছেন। দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের প্রাণহানি এখন নৈমিত্তিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে এবং হতাহতের ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি দেশে সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। এ প্রেক্ষাপটে মানুষ আশা করেছিল দেশে সড়ক দুর্ঘটনা কমবে। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনার মাত্রা বেড়েই চলেছে। নানা পদক্ষেপ নেওয়া সত্ত্বেও কেন দেশে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে তা ভালোভাবে খতিয়ে দেখা দরকার। দেশের সড়কগুলো মৃত্যুফাঁদে পরিণত হওয়ার অন্যতম কারণ চালকদের বেপরোয়া মনোভাব। কাজেই দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি তাদের মন-মানসিকতার পরিবতর্নের জন্যও পদক্ষেপ নিতে হবে। সড়কের ত্রুটি দূর করার পাশাপাশি যানবাহনের ত্রুটি দূর করার জন্যও নিতে হবে পদক্ষেপ। কম গতির নিষিদ্ধ যানবাহনের কারণে মহাসড়কে ঝুঁকি বাড়ছে। এসব ঝুঁকি এড়াতে কর্তৃপক্ষকে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে। পরিবহন কর্মীদের জীবনমানের উন্নয়নেও পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। সড়ক দুর্ঘটনার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে নানা পরামর্শ ও সুপারিশ প্রদান করা হলেও তা যে অরণ্যে রোদনে পর্যবসিত হচ্ছে, দেশে প্রতিদিন ঘটা সড়ক দুর্ঘটনাগুলোই এর বড় প্রমাণ। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা দরকার। দেশে দক্ষ চালকের অভাব রয়েছে। কাজেই দক্ষ চালক তৈরির জন্য জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। ফিটনেসবিহীন যানবাহন কিংবা লাইসেন্স ছাড়া চালক যাতে সড়কে গাড়ি চালাতে না পারে, তা যেভাবেই হোক নিশ্চিত করতে হবে। ফিটনেসবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনাসহ সড়ক ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন ক্ষেত্রে লোকবল কম, এ তথ্য আমরা জানি। তবে দুর্নীতি রোধে কর্তৃপক্ষ কঠোর হলে কম লোকবল নিয়েও বিভিন্ন ধরনের অভিযানে কাক্সিক্ষত সুফল পাওয়া সম্ভব। অভিযোগ আছে, অনেক পরিবহন মালিক চালকদের পর্যাপ্ত বিশ্রামের সুযোগ দেন না। ক্লান্ত-শ্রান্ত চালক গাড়ি চালালে স্বভাবতই তাতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে। দেশে সড়ক দুর্ঘটনা এখন এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, একজন যাত্রী নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবেন কিনা তা নিয়ে প্রতিমুহূর্তে স্বজনদের উৎকণ্ঠায় থাকতে হয়। বস্তুত যানবাহন চলাচলে নৈরাজ্যের বিষয়টি সর্বজনবিদিত। এ অবস্থায় সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কর্তৃপক্ষকে কঠোর হতে হবে। তবে এ সমস্যার সমাধানে যত পরিকল্পনাই গ্রহণ করা হোক না কেন, সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে দুর্নীতি রোধ করা না গেলে কাক্সিক্ষত ফল মিলবে কিনা সন্দেহ। এক্ষেত্রে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্যও নিতে হবে কার্যকর পদক্ষেপ।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button