সম্পাদকীয়

জালিয়াতি বন্ধে কঠোর হোন

কারিগরি শিক্ষা বোর্ড

বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট অরক্ষিত থাকার সুযোগ নিয়েছে জালিয়াতচক্র। সক্রিয় এ চক্রের সদস্যরা অর্থের বিনিময়ে জাল সার্টিফিকেট বাণিজ্য করেছে। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, এ অপকর্মের সঙ্গে বোর্ডেরই কতিপয় কর্মকর্তা জড়িত বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। এমনকি ওয়েবসাইট পরিচালনায় অর্থাৎ সাইটে শিক্ষার্থীদের তথ্য সংযোজন-বিয়োজনে গোপন পাসওয়ার্ড ব্যবহারের কথা থাকলেও খোদ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষের কাছেই নাকি ওয়েবসাইটের পাসওয়ার্ড নেই। এরই মধ্যে সার্টিফিকেট বাণিজ্য ও জালিয়াতির অভিযোগে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের খোদ চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব থেকে অপসারণ করা হয়েছে। এছাড়া জালিয়াতিতে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে চেয়ারম্যানের স্ত্রী এবং বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্টকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের তথ্য সংযোজন, বিয়োজন ও পরিবর্তন সংক্রান্ত আবেদন-নিবেদনের মূল ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক। মূল ব্যক্তি না হলেও অভিযুক্ত সিস্টেম অ্যানালিস্টের কাছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের গোপন পাসওয়ার্ড ছিল। অবৈধ সুবিধার বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন, রোল নম্বর তৈরি, রেজাল্ট পরিবর্তন-পরিবর্ধন, নাম ও জন্মতারিখ সংযোজন করতেন তিনি। ভুয়া লোকদের মধ্যে বিক্রি করা সার্টিফিকেট কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে আপলোডও করতেন। এর ফলে বাংলাদেশসহ যে কোনো দেশে বসে রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে গুগলে সার্চ করলে ওয়েবসাইট থেকে তা সঠিক হিসাবেই দেখা যেত। এ অপকর্মের স্বার্থে বিভিন্ন উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় শহরে অবস্থিত সরকারি-বেসরকারি কারিগরি স্কুল ও কলেজ, পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট, সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিচালক, প্রিন্সিপালদের সঙ্গেও ছিল তার গোপন যোগাযোগ। কোনো সেবাধর্মী সরকারি প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ, তার ওপর সেটি যদি হয় শিক্ষা বোর্ডের মতো সংবেদনশীল প্রতিষ্ঠানের, তাহলে প্রতিক্রিয়ার আর কোনো ভাষা থাকে না। এ সার্টিফিকেট বাণিজ্য ও জালিয়াতির সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক না কেন, চূড়ান্ত তদন্ত শেষে তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। আমরা আরও মনে করি, দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে শিক্ষিত ও দক্ষ করে গড়ে তোলার মূল হাতিয়ার শিক্ষা বোর্ডগুলোকে আরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনা প্রয়োজন। পাশাপাশি সার্টিফিকেটের মতো মূল্যায়নকেন্দ্রিক কর্মকা-কে আরও বেশি সতর্কতা ও নজরদারির আওতায় আনা দরকার। সার্টিফিকেট, মার্কশিট, রেজিস্ট্রেশন কার্ড ও প্রবেশপত্র তৈরিতে বিশেষ কাগজ, কালিসহ সংবেদনশীল যেসব উপাদান ব্যবহৃত হয়, সেগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতেও সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button