তাপমাত্রা কমাতে বনায়নের বিকল্প নেই

মানুষ ও পরিবেশের পরম বন্ধু হলো গাছ। গাছ আমাদের পরিবেশ স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষের গুরুত্ব অপরিসীম। পাশাপাশি সবুজ বৃক্ষের মনোরম দৃশ্য ও নির্মল বাতাসসমৃদ্ধ প্রাকৃতিক পরিবেশ সব মানুষের চিত্তবিনোদনের আকর্ষণীয় উপাদান। কিন্তু বর্তমানে উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক বনায়ন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) মান অনুযায়ী নগরীতে সবুজ অঞ্চল থাকতে হয় জনপ্রতি সর্বনিম্ন ৯ বর্গমিটার। যদিও ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে জনপ্রতি এই পরিমাণ সবুজ অঞ্চল আছে মাত্র ছয়টি ওয়ার্ডে। বাকি ৮৬টি অর্থাৎ ৯০ শতাংশের বেশি ওয়ার্ডেই প্রয়োজনীয় সবুজ অঞ্চল নেই। সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দেখা যায় ১৯৯৫ সালে ঢাকায় সবুজ অঞ্চল ছিল ১২ শতাংশ। ২০১৫ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৮ শতাংশে। আর বর্তমানে ঢাকায় সবুজ অঞ্চল ৬-৭ শতাংশের কিছু কম বেশী। যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হুমকি স্বরূপ। এমনকি এরই মধ্যে আমরা তার ফল দেখতে শুরু করেছি। এ মাসে চুয়াডাঙ্গা, যশোর এবং পাবনার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এছাড়া খুলনা বিভাগের বাকী অংশ, রাজশাহী জেলা এবং ঢাকা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। প্রচ- গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে জনজীবন। দেশের এমন আবহাওয়া গত কয়েক বছরেও দেখা যায়নি। এক গবেষণায় দেখা যায় শুধু ঢাকাতেই বছরে অসহনীয় গরম দিনের সংখ্যা গত ছয় দশকে অন্তত তিনগুণ বেড়েছে। এর আগে ২০২১ সালের ২৫শে এপ্রিল আগের ২৬ বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙে তাপমাত্রার ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ড হয়েছিলো বাংলাদেশে এবং ওইদিন দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪১ দশমিক দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস। এবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে গতকাল ২০শে এপ্রিল যশোরে ৪২ দশমিক ছয় ডিগ্রি। একটি ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশের জন্য অজীব ও জীব প্রতিটি উপাদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভৌতিক, রাসায়নিক ও জৈবিক কারণে এ উপাদানগুলোর মধ্যে যেকোনো একটির ব্যাপক পরিবর্তন ঘটলে সামগ্রিক পরিবেশের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ে এবং পরিবেশ-দূষণ হয়। মানুষের অসচেতনতা এবং অনিয়ন্ত্রিত আচরণের কারণেই পরিবেশ-দূষণ হচ্ছে ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে। দেশে চলমান তীব্র দাবদাহের পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি বায়ুদূষণও দায়ী। এ জন্য তাপমাত্রা বৃদ্ধি কমাতে বায়ুদূষণ কমানো জরুরি। এমতাবস্থায় অতিরিক্ত তাপমাত্রা জনিত পরিস্থিতি সামাল দিতে নগর ও শহরে প্রচুর সংখ্যক গাছ লাগাতে হবে। সরকার প্রচুর সংখ্যক গাছ লাগাচ্ছে। তাপমাত্রা কমানোর জন্য অনেক প্রয়াসের মাঝে পরিকল্পিত বনায়ন অন্যতম। এ জন্য অঞ্চলভিত্তিক বনায়ন অতি জরুরি। যে অঞ্চলে বনভূমি কম, সেই অঞ্চলে বৃক্ষরোপণ অভিযান জোরদার করতে হবে। জনগণকেও প্রচুর পরিমাণে বৃক্ষরোপণ করতে হবে। রাজধানী ঢাকায় মাটি ও পানির জলাশয়ের পরিমাণ বাড়াতে হবে। শুধু গাছ লাগালেই হবে না, সেগুলোর উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণও করতে হবে। আর তা না হলে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে এক ভয়ানক ভবিষ্যৎ।