দুর্নীতি ক্রমেই বাড়ছে, দেশ কোথায় যাচ্ছে?

স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে পূর্ণ উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পথে বাংলাদেশ। ২০২৬ সালে এ উত্তরণ ঘটবে বাংলাদেশের। বর্তমান সরকারের লক্ষ্য বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করা। বিশেষ করে একটি উন্নয়নশীল দেশ গড়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতি মুক্ত করা অতি প্রয়োজনীয় বিষয়। কিন্তু দেশ তার বিপরীত দিকেই হাঁটছে। প্রতিনিয়ত দুর্নীতিতে আমাদের দেশ অবনতির দিকে যাচ্ছে! তাহলে কীভাবে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে? কারা দুর্নীতির অভিশাপ থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করবে? যেখানে দেশ উন্নয়নশীল হওয়ার কথা সেখানে প্রতিনিয়ত ধ্বংসের দিকে চলে যাচ্ছে। কারা নিবে এই দায়ভার? বাংলাদেশের দুর্নীতি চক্রে সরকারি কর্মচারীদের ভূমিকা অত্যন্ত শক্তিশালী। প্রশ্ন হলো, সরকার সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা অনেক গুণ বাড়িয়ে দিলেও তারা সরকারি আইনের অবজ্ঞা প্রদর্শন করে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছে। সরকারি কর্মচারীদের দলীয়করণকেও এজন্য কিছুটা দায়ী করা যায়। দলবাজ সরকারি কর্মচারীরা হয়ে উঠেছেন দুর্নীতিবাজ। সরকারি কর্মচারীরা যেমন দুর্নীতিতে জড়িয়ে আছে তেমনি বেসরকারি খাত, বিশেষ করে ব্যবসায়ীরা দুর্নীতির জন্য কম দায়ী নন। বেসরকারি খাত বিভিন্নভাবে দুর্নীতি করে। কর ফাঁকি দিতে অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তাদের প্রকৃত সম্পদ ও লাভের পরিমাণ কর কর্মকর্তাদের দেখায় না। আমদানি-রপ্তানিতে আন্ডার ইনভয়েসিং ও ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে কর ফাঁকি দেয়া একটি মামুলি ব্যাপার। এসব খবর আমরা প্রায় পত্রপত্রিকায় দেখে থাকি। জার্মানির বার্লিনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) দুর্নীতি ধারণাসূচক ২০২৩-এর প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থান ১০তম, যা বিগত বছর ছিল ১২তম। টিআই বলেছে, ১০০ স্কোরের মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ২৪, যা গতবারের চেয়ে ২ পয়েন্ট কম। গত বছর বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২৫। তালিকার ১০০ স্কোরের মধ্যে সর্বোচ্চ স্কোর প্রাপ্তির ক্রমানুসারে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮০ টি দেশের মধ্যে ১৪৯ তম। যা গত বছর ছিল ১৪৭ তম অবস্থানে। গত এক যুগের মধ্যে বাংলাদেশে এবার সবচেয়ে বেশি। রাজনীতিক, ব্যবসায়ী এবং কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের দুর্নীতির খবর মিডিয়ায় অহরহ প্রকাশ হচ্ছে। কানাডা ও দুবাইয়ে বাংলাদেশিদের অবৈধভাবে বাড়ি কেনাসহ সম্পদ গড়ে তোলার খবর মিডিয়ায় গুরুত্বসহ প্রকাশ হচ্ছে। এরা মূলত রাজনীতিক, ব্যবসায়ী এবং ক্ষমতাসীন দলের আদর্শ ও ভাবধারায় বিশ্বাসী কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। বলা হয়ে থাকে, এরা রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত শক্তিশালী। যত শক্তিশালী হোক, প্রাপ্ত ক্ষমতাবলে দুদককে এসব অভিযোগ সুষ্ঠুভাবে অনুসন্ধান করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হলে সিপিআই সূচকে বাংলাদেশ সম্মানজনক অবস্থানে চলে আসবে।