সম্পাদকীয়

অহেতুক বৃদ্ধি বন্ধ করুন

ওষুধের দাম

দেশে গত কয়েক বছর ধরে দফায় দফায় ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে। বিভিন্ন রোগের ওষুধের দাম গড়ে বেড়েছে ৩৫ শতাংশ। চলতি বছরের শুরুতেই ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প মালিক সমিতির নেতারা তখন বলেছিলেন, ঋণের সুদহার বেড়ে যাওয়া, গ্যাস-বিদ্যুতের বাড়তি দর, জ্বালানি সরবরাহ কমে যাওয়া এবং কাঁচামাল ক্রয়ে ডলার সংকটের কারণে ওষুধের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এটা খুবই স্বাভাবিক যে ওষুধের মূল্যবৃদ্ধিতে দেশের মানুষের ওপর আর্থিক চাপ বেড়েছে। এমনিতেই ঊর্ধ্বমুখী পণ্যমূল্যের বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে মানুষকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এর মধ্যে ওষুধের দাম যে মাত্রায় বাড়ানো হয়েছে, তা শুধু অযৌক্তিক নয়, অন্যায়ও। প্রায় প্রতিবছরই ওষুধের দাম একাধিকবার বাড়ানো হয়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, এ ক্ষেত্রে কারো কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ন্যূনতম যৌক্তিক অবস্থানে রাখার কোনো চেষ্টাও দৃশ্যমান নয়। দেখা যায়, একই জেনেরিকের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ওষুধের দামে অনেক পার্থক্য। এদিকে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর করা রিট আবেদনের শুনানির পর ইচ্ছামাফিক ওষুধের দাম নির্ধারণে কোম্পানিগুলোকে বিরত রাখতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে অনুমোদন ছাড়া বিদেশি ওষুধের কাঁচামাল আমদানি, ওষুধ তৈরি-বিক্রি থেকে ওষুধ কোম্পানিগুলোকে বিরত রাখতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওষুধ ও কসমেটিকস আইন, ২০২৩ এর ৩০ ধারা অনুসারে ওষুধের দাম নির্ধারণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না এবং ওষুধ ও কসমেটিকস আইন, ২০২৩ এর ৩০ ধারা অনুসারে ওষুধের দাম নির্ধারণ করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই), জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যানকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। ক্যাব-এর পক্ষে করা রিটে বলা হয়েছে, ওষুধ আইন, ১৯৪০ ও ওষুধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ, ১৯৮২-এর বিধান অনুসারে গেজেটের মাধ্যমে ওষুধের দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার কথা থাকলেও সরকার ২০০০ সাল থেকে তা করছে না। এ সুযোগে কোম্পানিগুলো ইচ্ছামাফিক ওষুধের দাম নির্ধারণ করে অযৌক্তিক মুনাফা লুটছে। ওষুধ প্রস্তুত, আমদানি ও বিপণনের ব্যবসাটি অন্য দশটি ব্যবসার মতো নয়। ওষুধ একটি সেবাপণ্য। একই ওষুধ বিভিন্ন দামে বিক্রি হতে পারে না। মুনাফার লোভে এ ধরনের প্রবণতা একেবারেই কাম্য নয়। এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী যে বাণিজ্যিক সুবিধা নিচ্ছে তা অপরাধ হিসেবেই বিবেচনা করতে হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে আরো তৎপর হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button