ছাত্র রাজনীতি নয়, বন্ধ হোক ক্ষমতার অপব্যবহার

বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতির উজ্জ্বল ঐতিহ্য রয়েছে। ৫২এর ভাষা আন্দোলন, ৬২এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯এর গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র আন্দোলনের গৌরবজনক ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু ৯০ সালে স্বৈরাচারের পতনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের যে নতুন অভিযাত্রা শুরু হয়েছে, তার সময় থেকেই শুরু হয়েছে ছাত্র রাজনীতির পচন। ফলে এখন ছাত্রদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সবাই শংকিত। আমরা জানি ছাত্র যার অভিধা, অধ্যয়ন তার তপস্যা। ভবিষ্যৎ জীবন সুন্দরভাবে গড়তে অধ্যয়নের মাধ্যমে সাফল্য অর্জনই ছাত্রসমাজের প্রধান কাজ। কিন্তু বর্তমানে আমরা দেখতে পাচ্ছি, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের হাতিয়ার হয়ে পড়েছে ছাত্রসমাজ। ছাত্র রাজনীতির যে ঐতিহ্য একদা ছিল, তা আজ বিলীন হতে বসেছে। শিক্ষার্থীদের কাছে নিয়মানুবর্তিতা, শৃংখলা ও দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ যেখানে কাক্সিক্ষত, সেখানে এর বিপরীত চিত্রই পরিলক্ষিত হচ্ছে বেশি। ছাত্রদের যেন পড়াশোনা নয়, রাজনীতির নামে গুন্ডামি প্রধান হয়ে গেছে এদেশে। এখন ছাত্ররা দেশের স্বার্থের কথা ভাবে না। তারা ভাবে নিজেদের স্বার্থের কথা। রাজনীতিতে তাদের যে আদর্শ ছিল তা আজ ভূলুণ্ঠিত। ছাত্র সংগঠনগুলো অতিমাত্রায় দলীয় রাজনীতিতে ঝুঁকে পড়ায় তাদের মধ্যে সহিংসতা বাড়ছে। সংগঠনগুলো সামান্য কারণেই প্রতিপক্ষের ওপর চড়াও হচ্ছে। অনেক মেধাবী ছাত্রের জীবন এভাবে অকালে ঝরে পড়ছে। সংঘাতের কারণে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বিঘিœত হচ্ছে লেখাপড়ার স্বাভাবিক পরিবেশ। অথচ ছাত্র রাজনীতি এমন হলে তা থেকে অসততার, অন্যকে অত্যাচার করার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পরিণত হবে। আর তা প্রায় হয়েই গেছে। বাঁশের চেয়ে কঞ্চি আজকাল বড় হলে যা হয়! দেশ যখন নানা ধরনের সংকট অতিক্রম করছে ঠিক সেই সময়ে সরকারি দলের সহযোগী এসব সংগঠনের নেতা-কর্মীরা মেতেছে ধর্ষণ আর সংঘর্ষে। এ ছাড়া কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে খুনের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। গ্যাং কালচারে জড়িয়ে পড়া এসব কিশোর অপরাধীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে না পারলে ভবিষ্যতে সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বড় ধরনের হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে। বর্তমানে ছাত্ররাজনীতির নামে যে ধ্বংসাত্মক ও রক্তাক্ত কর্মকা- চলছে, তা মানুষ আর নিতে পারছে না। তাই শিক্ষার পরিবেশ পরিষদ গঠন করুন। সব সংগঠনের সমন্বয়ে নিয়মিত বৈঠকের ব্যবস্থা করুন। সেখানে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হোক। কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিন। এই বিষয়ে কঠোর হোন, ছাত্ররাজনীতি নয়, অপরাজনীতি বন্ধ হোক চিরতরে। আর সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে আসুক শিক্ষা এবং ছাত্র রাজনীতির সুষ্ঠু পরিবেশ।