সম্পাদকীয়

শিক্ষাব্যবস্থাকে আধুনিকায়ন করতে হবে

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের ফলাফল হিসেবে দীর্ঘদিনের ফেসিস্ট সরকারের অবসানের পর গত ৫ আগস্ট প্রফেসর ডক্টর ইউনূসের নেতৃত্বে এক অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। চেতনায় ২০২৪ এবং হৃদয়ে বাংলাদেশ তারুণ্যের এই মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে দ্বিতীয় স্বাধীনতার আনন্দ উৎসব মুখরিত পরিবেশে দেশ পুনর্গঠনের অঙ্গীকারে এ ছাত্র-জনতার এ সরকারের যাত্রা শুরু হয়। রাতারাতি অনেক কিছু হয়তো সম্ভব হবে না। কেননা, দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রেই জমে আছে আবর্জনার স্তূপ। তাই এই পুঞ্জীভূত আবর্জনার স্তূপ দূরীকরণ হবে এক মহিরুহের কাজ। আর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য এ সরকারকে দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে। অসম্ভবকে সম্ভবে পরিণত করাই হচ্ছে বীরের ধর্ম। ১৯৭১ সাল থেকে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার কোনো সংস্কার হয়নি। আমরা যে তিমির থেকে যাত্রা শুরু করেছিলাম, সে তিমিরেই ঘুরপাক খাচ্ছিলাম। বর্তমান সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা এবং শিক্ষা সচিব অত্যন্ত মেধাসম্পন্ন ও অভিজ্ঞতার ধার ও ভারে সমৃদ্ধ। আমরা আশা করি তাদের যুক্তি, বুদ্ধি ও প্রজ্ঞায় শিক্ষার কালিমা দূরীভূত হবে। শিক্ষা হচ্ছে জাতির মেরুদ-। তাই শিক্ষার উন্নতিতে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয় বিশ্বের প্রায় সব দেশ। এ ক্ষেত্রে যারা যত বেশি সফল হচ্ছে, তারা তত বেশি উন্নতি করছে। সেই শিক্ষাও প্রতিনিয়তই আমূল পরিবর্তন হয়ে সময়োপযোগী হচ্ছে। বর্তমানে চলছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ। বর্তমানে ব্যবহৃত প্রযুক্তির অন্যতম হচ্ছে অটোমেশন, রোবটিক্স, ব্লক চেইন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, যা চতুর্থ শিল্প বিপ্লব বলে খ্যাত। দেশের শিক্ষা খাতের অবস্থা চরম খারাপ! ফলে দেশের কাক্সিক্ষত ও সার্বিক উন্নতি হচ্ছে না। এই অবস্থায় প্রযুক্তির ব্যবহার, বিশেষ করে এআই ভিত্তিক প্রযুক্তির ব্যবহার হুহু করে বাড়ছে বিশ্বব্যাপীই। চ্যাটজিপিটি প্রায় সব ক্ষেত্রেই বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনছে। সুনির্দিষ্ট কণ্ঠের রেকর্ডিং করতেও (ভয়েস ক্লোনিং) এআই পারদর্শী। ফলে এআই মানুষের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠার আশঙ্কা সৃষ্টি করছে। তাই জনবহুল দেশে বেকারত্ব বেড়ে মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থা সর্বাধিক হবে নিঃসন্দেহে। কারণ, প্রযুক্তি ব্যবহার না করলে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা এবং এলডিসি উত্তরণের সংকট মোকাবেলা করা কঠিন। দেশের সার্বিক ও টেকসই উন্নতির জন্য সময়োপযোগী তথা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ভিত্তিক শিক্ষা অপরিহার্য। বর্তমান জ্ঞান-বিজ্ঞানের যুগে বৃত্তিমূলক বা কারিগরি শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতির উন্নতি সম্ভব নয়। সাধারণ সনদপত্র নয় বৃত্তিমূলক শিক্ষা লাভ করে জীবন সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। তাহলে জাতি অর্থনৈতিক দুর্দশা থেকে মুক্তি পাবে। বাঁচবে দেশ। সার্থক হবে আমাদের অর্জিত স্বাধীনতা।

 

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button