উচ্চশিক্ষিত বেকার বেড়েই চলছে: উদ্বিগ্ন হচ্ছে তরুণ সমাজ
বেকারের বিপুল সংখ্যা বাংলাদেশে অন্যতম প্রধান সমস্যা। তরুণ জনগোষ্ঠী বেশি থাকার কারণে বাংলাদেশে এখন জনমিতির সুবিধা (ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড) বিরাজমান। দেশের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশই তরুণ, যাঁরা কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী। কিন্তু অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্যে সম্প্রসারণ হলেও কর্মসংস্থান সেই অনুসারে বাড়ানো যাচ্ছে না। শোভন চাকরি না পেয়ে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়েও অনেকে টিউশনি, পাঠাও-উবারে ডেলিভারিম্যান, বিক্রয়কর্মীসহ নানা ধরনের কাজ করে জীবন ধারণ করছেন। এমনকি তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির সরকারি চাকরির জন্যও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীরা আবেদন করছেন। ২০২২ সালের শ্রমশক্তি জরিপ অনুসারে, তখন দেশে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ ৮২ হাজার। এই বেকারদের মধ্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী আছেন ৭ লাখ ৯৯ হাজার। এর মানে হলো মোট বেকারের প্রায় ৩১ শতাংশই উচ্চশিক্ষিত। দেশের মোট বেকারের প্রতি তিনজনের একজন ‘বিএ-এমএ’ পাস করেও চাকরি পাচ্ছেন না। ২০১৭ সালে শ্রমশক্তি জরিপ অনুসারে, তখন দেশে বেকারের সংখ্যা ছিল ২৬ লাখ ৭৭ হাজার। এই বেকার তরুণ গোষ্ঠীর মধ্যে ৪ লাখ ৫ হাজারের চাকরিপ্রত্যাশীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল কমপক্ষে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। দেখা যাচ্ছে মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৪ লাখ। বিবিএসের হিসাব অনুসারে দেশের মোট বেকারের মধ্যে সাড়ে ২১ লাখই তরুণ-তরুণী। বেকারদের ৮৩ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ২৯ বছর। সার্বিকভাবে কয়েক বছর ধরে দেশে বেকারের মোট সংখ্যা প্রায় অপরিবর্তিত। কিন্তু এর মধ্যে খারাপ খবর হলো, সাম্প্রতিক সময়ে উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়েছে। বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট চলছে, যথেষ্ট দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ হচ্ছে না। এসব কারণে বেসরকারি খাতে চাকরির সুযোগ কমেছে। পাশাপাশি সরকারি চাকরিতে কোটার কারণে মেধাবীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত থাকায় তরুণদের অনেকেই হতাশ হয়ে পড়ছেন। সরকারি চাকরিতে অনিয়মের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা কোটাবিরোধী আন্দোলন করেন। এই আন্দোলন একপর্যায়ে গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। যার ফলে স্বৈরাচার সরকারের পতন হয়। মূলত চাকরি পাওয়া নিয়ে হতাশা থেকেই সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা এই আন্দোলন গড়ে তোলেন। এখন প্রশ্ন থাকতেই পারে শিক্ষার্থীরা যে কারণে রাজপথে তাজা প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছেন তার সমাধান কী আধো মিলবে? প্রশ্ন থেকেই গেল। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনায় নিযুক্ত রয়েছেন। আমরা মনে করি, অন্তর্বর্তী সরকার উচ্চশিক্ষিত বেকারদের বিষয়ের নজরদারি করাটা জরুরি। বিশেষ করে শিক্ষিত বেকার সমস্যা সমাধানে এই সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে এবং সমাধান করতে হবে। এটাই এখন সকলের প্রত্যাশা।