রাজধানীতে অবাধে বিক্রি হচ্ছে লাইনের পানি: দ্রুত পদক্ষেপ নিন
বিশুদ্ধ পানি ছাড়া আমাদের জীবন চলে না। আমাদের শরীরের দুই-তৃতীয়াংশ হচ্ছে পানি। আর এজন্যই বলা হয় পানির অপর নাম জীবন। সুস্থ থাকতে এবং রোগ প্রতিরোধ করতে প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি। তাই মানবজীবনে সুস্থ থাকতে হলে বিশুদ্ধ খাবার পানির কোনো বিকল্প নেই। আদিকাল থেকেই বিশুদ্ধ খাবার পানি সংগ্রহ করার জন্য মানুষের সংগ্রাম করতে হয়েছে। সুস্থ জীবনের জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানির সরবরাহ নিশ্চিত করাই বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমরা কতটুকু সচেতন তা নিয়ে সংশয় আছে। বিশুদ্ধ পানি আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ এটা সবারই জানা আছে। কিন্তু সম্প্রতি অভিযোগ উঠেছে, বিশুদ্ধ খাবার পানির নামে রাজধানী ঢাকায় জারে ভরে অবাধে বিক্রি হচ্ছে লাইনের পানি। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ভেজাল পানির এ রমরমা ব্যবসা করছেন। বিএসটিআইর অনুমোদনহীন ঢাকায় এ ধরনের প্রতিষ্ঠান রয়েছে শত শত। অথচ প্রতিটি জারে ব্যবহার করা হচ্ছে বিএসটিআইর নকল স্টিকার। পত্রপত্রিকা থেকে জানা যায়, মগবাজার, বাংলামোটর, বনশ্রী, ভাটারা, খিলগাঁওসহ রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা বিক্রি হচ্ছে এসব ভেজাল পানি। এছাড়াও দেখা যায় রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এসব জারের পানি ব্যবহার হয়ে থাকে। বিশেষ করে নগরীর প্রায় প্রতিটি চায়ের দোকানেও রয়েছে এই জারের পানি। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) এক গবেষণায় ঢাকার ৯৭ ভাগ জারের পানিতে ক্ষতিকর মাত্রায় মানুষ ও প্রাণীর মলের জীবাণু পাওয়া গেছে। এমন ভীতিকর তথ্য প্রকাশ্যে আসার পর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসটিআই অভিযানে নামলেও এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি এ ব্যবসা। দেশের আইনে এভাবে দূষিত পানির অবৈধ বাণিজ্য দ-নীয় অপরাধ। পানি বিশুদ্ধকরণের ৪০ থেকে ৪১টি প্যারামিটার রয়েছে। এসব প্যারামিটার উত্তীর্ণ হলেই পানি সরবরাহ করা যাবে, অন্যথায় যাবে না। প্রায় প্রত্যেকদিন রাজধানীতে এভাবে সরাসরি ওয়াসা বা গভীর নলকূপের পানি জারে ভরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ বাসায়ও এ পানি ফুটিয়ে ছাড়া কেউ পান করেন না। দিনের পর দিন এভাবে অস্বাস্থ্যকর পানি সরবরাহের কারণে মানুষ নানা রোগ ব্যাধির সম্মুখীন হচ্ছেন। অথচ এই বিষয়ে সরকারিভাবে তেমন কোনো কার্যকর প্রতিরোধ এখনো গড়ে উঠেনি। মাঝে-মধ্যে দু-একটি অভিযান চালানো হলেও পানির মান যাচাইয়ে নেই কোনো কার্যকর পদক্ষেপ। পানির গুরুত্ব এবং কার্যকারিতার দিকে বিবেচনায় এখনি প্রয়োজন সরকারকে উদ্যোগী হওয়ার। আমরা আশা করব, দ্রুত অভিযান চালিয়ে এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনা হবে এবং রাজধানীতে বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা গড়ে তুলবেন সরকার।