সম্পাদকীয়

যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

যৌন নিপীড়ন ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টা, পাশাপাশি কোনও অযাচিত যৌন যোগাযোগ বা হুমকিসহ আক্রমণ সহ অনেকগুলি রূপ নেয়। সাধারণত যখন কোনও ব্যক্তির সম্মতি ব্যতীত কেউ পোশাকের মাধ্যমে এমনকি অন্য ব্যক্তির শরীরের কোনও অংশকে স্পর্শ করে তখনই তাকে যৌন নির্যাতন বলে। কোন দেশের মানুষের মর্যাদা ও অবস্থান নির্ধারিত হয় সে দেশের বিদ্যমান আইন, তার প্রয়োগ এবং মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার সংরক্ষণ দ্বারা। আমাদের জাতীয় অগ্রগতির স্বার্থেই নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ ও তাদের অধিকার সুরক্ষা করা এখন সময়ের দাবী। কেননা বাস্তবে বিভিন্ন স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং কর্মক্ষেত্রে নারীরা বিভিন্ন রকম যৌন নির্যাতন বা যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে যা নারীর শিক্ষা গ্রহণে এবং সুষ্ঠু ভাবে কর্ম স¤ক্সাদনে প্রচ- প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। এর প্রেক্ষিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধের জন্য পৃথক আইন প্রণয়নের আবশ্যকতা দেখা দিয়েছে। ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন করে। এই নীতির প্রথম অধ্যায়ে সরকার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কনভেনশন এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক দলিলে বর্ণিত প্রতিশ্রুতিতি অনুযায়ী বাংলাদেশের নারীদের অধিকার নিশ্চিত করবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এতৎসত্ত্বেও বিভিন্ন গণমাধ্যম, সেমিনার-সি¤েক্সাজিয়াম এবং বিভিন্ন সংস্থার গবেষণাপত্রের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানিমূলক ঘটনার আশংকাজনক ভাবে বৃদ্ধির ঘটনা পরিলক্ষিত হলেও এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে অর্থাৎ কর্মক্ষেত্রে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মহিলাদের সুরক্ষার জন্য কোন আইন প্রণয়ন করা হয়নি। কর্মস্থলে নারীরা যৌন হয়রানির শিকার হলেও চাকরি হারানো ও লোকলজ্জার ভয়ে তাঁরা বেশির ভাগ সময় চুপ থাকেন বা প্রতিবাদ করেন না। আবার কেউ প্রতিবাদ করতে চাইলেও অনেক সময় নতুন করে তাঁকে হয়রানির শিকার হতে হয়। যৌন হয়রানি প্রতিরোধে দ্রুত বিচার করে শাস্তি দৃশ্যমান করা জরুরি। একই সঙ্গে কর্মক্ষেত্রে নারীর জন্য মর্যাদাপূর্ণ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা দরকার। যৌন নির্যাতনের শিকার হলে একজন নারীর কর্মদক্ষতা হ্রাস পায়, যার নেতিবাচক প্রভাব কেবল ভুক্তভোগী নয়, প্রতিষ্ঠানের ওপর পড়ে। যৌন নির্যাতন এখনই থামানো না গেলে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা কেবল পোশাক খাত নয়, অন্য খাতেও কমে যাবে। শ্রমিক থেকে শুরু করে ব্যবস্থাপনা পর্যায় সবার মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো গেলে কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি কমে যাবে বলে আশা করা যায়। কেবল কর্মস্থলে নয়, ঘর, জনসমাগমস্থল, বসবাসসহ সর্বত্র নারীর ওপর নির্যাতন বাড়ছে। কেউ নির্যাতনের প্রতিবাদ করলে তার সুরক্ষা নিশ্চিত করা দরকার। তাই সরকার, প্রশাসনসহ সাধারণ মানুষকেও এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর ও প্রতিবাদী হতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button