সম্পাদকীয়

আটকা পড়া লাইসেন্স দ্রুত প্রদানের ব্যবস্থা নেয়া হোক

মাসের পর মাস ঘুরেও পেশাদার চালকের লাইসেন্সের স্মার্টকার্ড পাচ্ছেন না আবেদনকারীরা। অভিযোগ নিয়ে প্রতিদিনই ভিড় বাড়ছে বিআরটিএর মিরপুর ও বনানী কার্যালয়ে। স্মার্টকার্ড প্রাপ্তিতে বৈশ্বিক সংকটের দোহাই দিচ্ছে বিআরটিএ। গাড়ি চালাতে নতুন লাইসেন্স পাওয়া কিংবা আগের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সেটি নবায়ন করতে চালকদের মাসের পর মাস ধরনা দিতে হয়। পৃথিবীর কোথাও লাইসেন্স ছাড়া যানবাহন চালানোর রেওয়াজ না থাকলেও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ সেটিকেই নিয়ম করে ফেলেছে। লাইসেন্স না থাকায় সবচেয়ে ভোগান্তিতে আছেন বিদেশগামী কর্মীরা। স্মার্ট কার্ড ছাড়া তাঁরা বিদেশ যেতে পারছেন না। প্রতিদিনই বিআরটিএ’র বিভিন্ন কার্যালয়ের হাতে ডেলিভারি স্লিপ নিয়ে শতশত স্মার্টকার্ড লাইসেন্স প্রত্যাশী ভিড় করেন। নতুন লাইসেন্স প্রত্যাশী কিংবা নবায়নের আবেদনগুলো সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেও কার্ড সময়মতো পাচ্ছেন না অনেকেই। যাদের মধ্যে পেশাদার চালকের সংখ্যাই বেশি। লাইসেন্স না পেলেও ডেলিভারি রশিদে বিশেষ সিল দিয়ে গাড়ি চালানোর অনুমতি দিচ্ছে সংস্থাটি। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিআরটিএ’র কার্যালয়ে এসে শুধু মেলে সময় বৃদ্ধির অনুমতিপত্র। এতে যাতায়াতসহ নানা খরচ গুণতে হয় চালকদের। মোটরযানের লাইসেন্স হিসেবে ডুয়েল ইন্টারফেস পলিকার্বনেট স্মার্টকার্ড তৈরির জন্য ২০২০ সালের জুলাইয়ে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স-এমএসপি প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে ৫ বছরের জন্য চুক্তি করে বিআরটিএ। যেখানে ১২০ কোটি ৬ লাখ ২০ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী ৪০ লাখ লাইসেন্স কার্ড সরবরাহ করার কথা প্রতিষ্ঠানটির। নিজ কোম্পানিতে কার্ড তৈরি করলেও চুক্তি অনুযায়ী কার্ড সরবরাহ করতে পারছে না এমএসপি। চুক্তি অনুযায়ী বছরে ৮ লাখ করে স্মার্টকার্ড সরবরাহ করার কথা থাকলেও সাড়ে তিন বছরে কার্ড সরবরাহ করা হয়েছে ১৬ লাখের মতো। ডলার সংকটের কারণে এলসি খুলতে না পারাকেই কারণ হিসেবে বলছে প্রতিষ্ঠানটি। জানা গেছে বর্তমানে প্রায় সোয়া ছয় লক্ষ মানুষ টাকা জমা দিয়ে পরীক্ষাও শেষ করছেন কিন্তু পাচ্ছেন না লাইসেন্সের স্মার্ট কার্ড। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা। মানুষের এই ভোগান্তি তৈরি হয়েছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের আমলে। অভিযোগ রয়েছে, তখন পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দেওয়ার চেষ্টার কারণে জটিলতা তৈরি হয়। সেই থেকে ভুগছেন মানুষ। বছরের পর বছর এই ভোগান্তি চললেও আগের সরকার সমাধানের উদ্যোগ কেন নেয়নি, তার তদন্ত হওয়া দরকার। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ২০২১ সালে একটি জরিপে জানিয়েছিল, ড্রাইভিং লাইসেন্স নিতে গিয়ে দুর্নীতির শিকার হয় ৮৩ দশমিক ১ শতাংশ খানা (পরিবার)। ৮৩ দশমিক ৭ শতাংশ পরিবার সেবা নিয়েছে দালাল বা অন্য কোনো মাধ্যমে। আমরা নতুন সরকারের কাছে আশাবাদী যে এই সমস্যার দ্রুত একটি সমাধান তারা অবশ্যই করবেন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button