সম্পাদকীয়

সামাজিক অস্থিরতা বন্ধে উদ্যোগ নিতে হবে জরুরি

সারা বিশ্বে যখন অস্থিরতা বিদ্যমান, তখন গ্লোবাল ভিলেজের অংশ হিসেবে বাংলাদেশেও নানারূপ অস্থিরতা থাকিবে, এটা কি স্বাভাবিক নয়? বিশেষ করে, কোনো দেশে যখন আইনের শাসনের অভাব দেখা দেয় এবং রাজনীতি ও অর্থনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংকট থাকে, তখন সামাজিক অস্থিরতাও প্রকট আকার ধারণ করে। সাম্প্রতিক সরকার পতনের পর হঠাৎ করেই যেন বেড়ে চলছে সামাজিক অস্থিরতা। রাজনৈতিক সহিংসতার পাশাপাশি দিনদুপুরে ঘটছে ছিনতাই ও নারী হেনস্তার ঘটনা। অভিযোগ উঠেছে, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলছে নীরব চাঁদাবাজি, দখল। নানা অজুহাতে তৈরি হচ্ছে শ্রমিক অসন্তোষ। অশান্ত হয়ে উঠছে পাহাড়। মাঝে মাঝেই দেশের বিভিন্ন স্থানে গণপিটুনিতে নির্মম মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি রাজধানীর হাতিরঝিল থানাধীন মহানগর প্রজেক্ট এলাকায় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল দীপ্ত টিভির সম্প্রচার কর্মকর্তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ফ্ল্যাটের মালিকানা নিয়ে বিরোধের জেরে একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানের লোকজন ও ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা তাকে খুন করে। গত ২১ সেপ্টেম্বর বেলা ২টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় হামলার শিকার হয়েছেন এক পথচারী নারী। গত বুধবার রাতে ঢাকার কেরানীগঞ্জের কলাতিয়া ইউনিয়নের বেলনা এলাকায় অবস্থিত ইকো রিসোর্টের পাশে চালককে হত্যা করে অটোরিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। শুধু এই দু’চার টি ঘটনা নয়। এমন ঘটনা রাজধানীসহ সারা দেশে হরহামেশাই ঘটছে। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর গত দুই মাসে ৬২৫ জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে বেশির ভাগ পরিকল্পিত হত্যার শিকার। এর মধ্যে আগস্ট মাসে ৫৪১ জন ও সেপ্টেম্বরে ৮৪ জন নিহত হন। একই সঙ্গে দুই মাসে ১০ হাজারের বেশি মানুষ কমবেশি আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে গণপিটুনিতে মারা গেছেন ৬৫ জন। আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কমপক্ষে ৯০ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। সেপ্টেম্বরে ১১০ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৪৪ জন, যাদের মধ্যে ১৫ জন ১৮ বছরের কম বয়সি শিশু। মাঠপর্যায়ে পুলিশের অনুপস্থিতি, সরকার পরিবর্তনের পর পূর্ববিরোধ, দখলবাজি, আইনকে তোয়াক্কা না করা, রাজনৈতিক বিরোধসহ সামাজিক নানান বিরোধের জেরে খুনের ঘটনা গুলো ঘটছে বলে আমরা মনে করছি। ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের দুই মাস পূর্ণ হয়েছে। মানুষের সবচেয়ে বড় চাওয়া ছিল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করে দেশকে সংস্কার করা হবে। কিন্তু মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যায়নি এখনও। তাই সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার্থে সরকারকে জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগী হতে হবে। আমরা আশা করব, দ্রুত ওই সমস্যা সমাধান করে মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরিয়ে আনবেন অন্তর্বর্তী সরকার।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button