নেপথ্যের কারণ চিহ্নিত করা জরুরি
হজ নিবন্ধনে কম সাড়া
সরকারি-বেসরকারিভাবে হজ নিবন্ধনের প্রাথমিক সময়সীমা শেষ হয়ে এলেও আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। ২০২৫ সালের হজ নিবন্ধনের কার্যক্রম ৩০ নভেম্বর শেষ হবে। এখন পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারিভাবে হজের নিবন্ধন করেছেন মাত্র ২৩ হাজার ৭০৯ জন। উল্লেখ্য, সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জনের হজে যাওয়ার কথা রয়েছে। সেই হিসাবে এখনো কোটা খালি রয়েছে ১ লাখ ৩ হাজার ৪৮৯ জনের, যা শতকরা হিসাবে ৮১ শতাংশের বেশি। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের হজের কোটা কমিয়ে দেওয়া হয় কিনা, সেটাই ভাবনার বিষয়। গেল বছর বাংলাদেশ থেকে যাওয়া হজযাত্রীদের জন্য ইমিগ্রেশনের কাজ অনেক সহজ করে দেয় সৌদি আরব। এক চুক্তিতে দেশের সব হজযাত্রীর সৌদি অংশের ইমিগ্রেশন ঢাকায় সম্পন্ন করার পাশাপাশি সেদেশের বিমানবন্দরে যাতে ব্যাগের জন্য অপেক্ষা করতে না হয়, সে ব্যবস্থাও করা হয়। হজযাত্রীদের কষ্ট লাঘবের উদ্যোগ সত্ত্বেও এত কম নিবন্ধন হওয়া স্বভাবতই দুঃখজনক। অবশ্য এর পেছনে কিছু কারণও রয়েছে। ধারণা করা যায়, হজ প্যাকেজের উচ্চমূল্যই হজযাত্রী নিবন্ধনে ভাটা পড়ার মূল কারণ। হজে যেতে আগ্রহীরা বর্তমান হজ প্যাকেজের মূল্যকে অনেক বেশি মনে করছেন, বিশেষ করে মূল্যস্ফীতির এ সময়ে অনেকে হজে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেও যেতে পারছেন না। যদিও গত বছরের তুলনায় এবার সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রায় প্রায় ১ লাখ টাকা প্যাকেজপ্রতি কমানো হয়েছে, তবে সেটিও সন্তোষজনক নয় বলে অনেকের অভিমত। জানা যায়, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোয় হজের খরচ তুলনামূলক অনেক কম। প্রশ্ন উঠেছে, দেশে হজ প্যাকেজের মূল্য কেন এতটা বেশি? এক্ষেত্রে বিমানভাড়া বৃদ্ধি একটি কারণ অবশ্যই। তবে মনুষ্যসৃষ্ট কিছু কারণও হজ প্যাকেজের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে কাজ করছে। অভিযোগ আছে, হজকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা নানা সিন্ডিকেটের কাছে হজযাত্রীরা একরকম জিম্মি। হজ নিয়ে বাণিজ্য করার জন্য গড়ে উঠেছে হজকেন্দ্রিক মার্কেটিং অফিসার, কমিশন বাণিজ্য, এজেন্সির সিন্ডিকেট এবং হজযাত্রী পরিবহণ সিন্ডিকেট। সৌদি আরবে বাসাভাড়াকেন্দ্রিক প্রতারণা, কখনো কখনো হজযাত্রীদের জমা দেওয়া টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়াসহ নানা অবৈধ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে হজ এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে। এ পরিপ্রেক্ষিতে হজসংশ্লিষ্টদের কার্যক্রমে সরকারের নজরদারি ও হস্তক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়েছে। আমরা আশা করি, সরকার এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।