সম্পাদকীয়

গ্যাস ও কয়লা আমদানিতে জোর দিন

বিগত সরকার আমদানিনির্ভর জ্বালানির যে ভুল নীতি নিয়েছিল, তার চূড়ান্ত খেসারত দিতে হচ্ছে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিকে। শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং ব্যবসা ও বিনিয়োগে স্থবিরতা দেখা দেওয়ায় প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের চাকা ধীর হয়ে পড়ছে। এ বাস্তবতায় যেকোনো মূল্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন স্বাভাবিক রাখা এবং শিল্প খাতে জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা অন্তর্র্বতী সরকারের অগ্রাধিকার থাকতে হবে। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বিদায় নেওয়া হাসিনা সরকার জ্বালানির প্রাথমিক উৎস নিশ্চিত না করেই একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করে গিয়েছিল। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা প্রায় ২৬ হাজার মেগাওয়াট হওয়া সত্ত্বেও এখনকার সর্বোচ্চ চাহিদার ১৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করাও সম্ভব হচ্ছে না। দেশে দীর্ঘমেয়াদি সংকটের বড় একটি কারণ হচ্ছে ডলার সংকট। প্রয়োজনীয় গ্যাস ও কয়লা আমদানি করতে না পারায় এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বকেয়া পরিশোধ না হওয়ায় অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখতে হচ্ছে। ফলে শীত মৌসুম শুরুর আগের এই সময়টাতে যখন বিদ্যুতের চাহিদা অপেক্ষাকৃত কম, তখনো লোডশেডিং করতে হচ্ছে। কক্সবাজারের মহেশখালীতে অবস্থিত মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুটি ইউনিটে উৎপাদন সাময়িকভাবে বন্ধ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ১২শ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সম্পূর্ণ আমদানিনির্ভর। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত কয়লা বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে এবং গত বছর থেকেই নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে প্রকল্পটি সমস্যার মুখে পড়েছে। প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানান, তিন বছরের জন্য কয়লা সরবরাহের জন্য কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে। কিন্তু সাবেক প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বেআইনি সুবিধা দেওয়ার অভিযোগে দরপত্র আহ্বান প্রক্রিয়া ১০ মাস দেরিতে শুরু করেন। এই অভিযোগের ভিত্তিতে আদালতে অপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট গত জুলাইয়ে কয়লা আমদানিতে ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা দেয়, যা পরে উচ্চ আদালতে স্থগিত হলেও দীর্ঘমেয়াদে কয়লা আমদানির অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। কয়লাভিত্তিক বড় অন্যান্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র এখন জ্বালানির অভাবে চাহিদামাফিক উৎপাদন করতে পারছে না। অন্যদিকে ৩০৭ মেগাওয়াট বরিশাল ইলেকট্রিক পাওয়ারের বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিও বন্ধ রয়েছে। ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিটের মধ্যে একটি চালু রয়েছে। বন্ধ রয়েছে বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র এসএস পাওয়ারের একটি ইউনিট। এছাড়া ভারত থেকে আদানির একটি ইউনিট থেকেও বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে পূর্ণ সক্ষমতায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে থাকায় পায়রা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির একটি ইউনিট ৭ নভেম্বর থেকে রক্ষণাবেক্ষণে যাবে। এটি প্রায় দুই মাস বন্ধ থাকবে বলে বিসিপিসিএল সূত্রে জানা গেছে। দেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো অব্যাহতভাবে উৎপাদন সংকটে পড়ার কারণ এগুলোর জ্বালানি আমদানি বা এজন্য প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান নিয়ে সুনির্দিষ্ট ও দীর্ঘমেয়াদি কোনো পরিকল্পনা করা হয়নি। পরিকল্পনার অভাব ও জ্বালানি খাতে অতিমাত্রায় আমদানিনির্ভরতার কারণে বড় সক্ষমতার এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র এখন চালানো যাচ্ছে না। গ্যাস, কয়লা আমদানির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করতে হবে। আসন্ন গ্রীষ্ম মৌসুমে চাহিদামাফিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জ্বালানির প্রাথমিক উৎসের জোগান নিশ্চিতের পরিকল্পনা ও উদ্যোগ এখনই নেওয়া প্রয়োজন।

সংশ্লিষ্ট সংবাদ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button